পৃথিবীতে এক হাজার, দুই হাজার বা তারও বেশি সময়ের আগে মানুষ দেখতে কেমন ছিলেন এ নিয়ে আমরা প্রায়ই ভাবি। কেমন ছিলেন আমাদের পূর্ব প্রজন্মের মানুষ তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কৌতুহলও কাজ করে।
সেই কৌতুহল মেটাতে এবার সৌদি আরবে তৈরি করা হয়েছে হিনাত নামের এক নারীর মুখাবয়ব। যিনি ২ হাজার বছর আগে সৌদির নাবাতাঈনের হেগরা শহরের আল-উলারে জন্ম নিয়েছিলেন। আবার সেখানেই ৪০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছিলেন তিনি।
হিনাত ছিলেন ধনী পরিবারের নারী। প্রত্নতত্ত্ববিদরা ২০০৮ সালে তার সমাধি খুঁজে পেয়েছিলেন। সেখানে পাওয়া গিয়েছিল তার কঙ্কাল। আর সেই কঙ্কালের খুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে প্রত্নতত্ত্ববিদ, শিক্ষাবিদ, ফরেনসিক বিজ্ঞানী এবং মডেল নির্মাতারা একসাথে মিলে হিনাতের মুখের আকৃতি তৈরি করেছেন।
বর্তমানে এটি সৌদি আরবের প্রাচীন নগরী আল-উলার হেগরা ওয়েলকাম সেন্টারে রাখা আছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এটি সকলে দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
২০০৮ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথভাবে পুরাকীর্তি খুঁজে বের করার মিশনে নামেন সৌদির প্রত্নতত্ত্ববিদরা। ওই সময় জাবাল আল-আহমারের পূর্ব ঢালে একটি নজরকারা সমাধির খোঁজ পান তারা।
ওই সমাধিস্থলের প্রবেশদ্বারে লেখা ছিল, ‘এই হলো সেই সমাধিস্থল— যেটি ওয়াহবুরের মেয়ে হিনাত, তার নিজের জন্য এবং তার সন্তান এবং বংশধরের জন্য তৈরি করেছেন।’
সেখানে আরও লেখা ছিল, ‘কারও এই সমাধি বিক্রি বা লিজ দেওয়ার অধিকার নেই।’
সেখানে তারিখ দেওয়া ছিল, নাবাতাঈনদের রাজা মালিকুর রাজত্বের প্রথম ২০ বছরের মধ্যে। ধারণা করা হয় এটি খ্রিষ্টপূর্ব ৬০ শতাব্দির।
হেগরার অন্যান্য সমাধির মতো এ সমাধির কোনো ক্ষতি হয়নি। খুব সম্ভবত বালুর প্রবাহের কারণে কয়েকশ বছর এটি আড়ালেই ছিল।
সুন্দর পাথরের স্লাবের তৈরি প্রবেশদ্বারটিও অক্ষত ছিল। তবে এর ভেতরে থাকা কবরগুলো বালুতে ঢেকে যায়। সমাধিস্থলটির ভেতর ৮০টি দেহাবশেষ পাওয়া যায়। যখন এগুলো খুড়ে ওপরে তোলা হয় তখন বেশিরভাগই ভঙ্গুর অবস্থায় পাওয়া যায়। কিন্তু একটি কঙ্কাল প্রায় অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়। যেহেতু ওই কবরটি ছিল ওই সমাধিস্থলের অন্যতম পুরনো। ফলে ধারণা করা হয় এটি হিনাতের কবর।
হিনাতের কঙ্কালের মাথাটি সংরক্ষণ করা হয়, যেন এ থেকে তথ্য পাওয়া যায় এবং এটিকে একটি আকৃতি দেওয়া হয়।
এদিকে হিনাতের মুখায়বটি সামনে আসার পর আল-উলার অনেকে বলছেন— এর সঙ্গে তারা তাদের আত্মীয়দের চেহারার মিল খুঁজে পেয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন ওনি দেখতে আমার আমার ফুফুর মতো, আমার দাদির মতো!