10675

09/23/2024 কোটি টাকা বকেয়া রেখেই ম্যাচ পরিচালনা করছেন রেফারিরা

কোটি টাকা বকেয়া রেখেই ম্যাচ পরিচালনা করছেন রেফারিরা

ক্রীড়া ডেস্ক

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৩৭

আগামী শনিবার শেষ হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের প্রথম লেগ। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই লিগে দুই লেগ মিলিয়ে মোট ১১০টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্বের ৫৫ ম্যাচ শেষ হতে চললেও এখনো প্রাপ্য সম্মানী পাননি রেফারিরা।

চলতি মৌসুমে সমাপ্ত স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপ, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ কোনো প্রতিযোগিতারই অর্থ পাননি তারা। উল্টো গত মৌসুমেরও কিছু বকেয়া বাকি থেকে গেছে। রেফারিদের হিসাব অনুযায়ী, সবমিলিয়ে তাদের পাওনা জমেছে দেড় কোটি টাকার মতো।

ফুটবলের অন্যতম প্রাণ রেফারি। সেই রেফারিদের নিয়ে বাফুফে বরাবরই উদাসীন। গত মৌসুমের মাঝপথে বকেয়া আদায় ও সম্মানী বৃদ্ধির জন্য বাঁশি না বাজানোর পথে হেটেছিলেন তারা। সে সময় বাফুফে রেফারিদের সম্মানী বৃদ্ধির পাশাপাশি নিয়মিত বকেয়া পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই আশ্বাস আর বাস্তবতা বেশ ভিন্নই। রেফারিদের তথ্যমতে, গত বছরের নভেম্বরের পর কোনো সম্মানী পাননি তারা।

কোড অব কন্ডাক্টের কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেফারি বলছেন,‌ ‌‘গত প্রিমিয়ার লিগে মোট ১৫৬টি খেলার মধ্যে মাত্র ৬২টি ম্যাচের ফি পেয়েছি। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের গত আসরের অর্ধেক বিল এখনো বাকি।’

বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী রেফারিজ কমিটির চেয়ারম্যান। রেফারিদের বকেয়া প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে তিনি মন্তব্য করেছিলেন,‌ ‘কিছুদিন আগে সংসদীয় কমিটির (যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি) সভা শেষে আমি এই বিষয়ে কাজ করেছি। সাধারণ সম্পাদক (আবু নাইম সোহাগ) ও আজাদ রহমান (হেড অব রেফারিজ) আমার সঙ্গে ছিলেন। কয়েক লাখ টাকার বিল পরিশোধের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই বিল প্রদানের পর বকেয়া অর্ধকোটির কাছাকাছি থাকবে। সেটাও দ্রুত পরিশোধ করা হবে।’

তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো রেফারি এখনো তাদের সম্মানী পাননি বলে জানিয়েছেন।

গত বছর আন্দোলনের পর রেফারিদের সম্মানী কিছুটা বেড়েছে। এখন প্রিমিয়ার লিগে একটি ম্যাচ পরিচালনা করতে রেফারি-ম্যাচ কমিশনার বাবদ বাফুফের ৪০-৫০ হাজার টাকা (ভেন্যু ও রেফারিভেদে) ব্যয় হয়। রেফারি/ম্যাচ কমিশনারদের বিল ম্যাচপ্রতি গড়ে ৪০ হাজার করে হলে চলতি মৌসুমেই বকেয়ার পরিমাণ প্রায় অর্ধকোটি হয়ে যায়। আবার, গত মৌসুম মিলিয়ে হিসাব করলে পার হয়ে যায় কোটির অঙ্ক।

গত বছর রেফারিরা আন্দোলন করলেও এবার তারা নিশ্চুপ। গত বছর আন্দোলনের ফলে সকল রেফারিদের সম্মানী বাড়লেও যারা আন্দোলন করেছিলেন তারা ফেডারেশনের রোষানলের শিকার হয়েছেন। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা অনেক দিন ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পাননি। সম্মানী বৃদ্ধি হওয়ায় অন্য রেফারিরা তখন আন্দোলনে নেতৃত্বকারীদের পাশে ছিলেন না। গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে তাই এবার আর আন্দোলনের পথে হাটেননি কেউ।

তবে দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে এক রেফারি জানান,‌‌ ‘কুমিল্লা, রাজশাহীতে বাঁশি বাজাতে বা পতাকা তুলতে আমাদের নিজের ঘাটের পয়সা খরচ করে যেতে হয়। যাতায়াত, আবাসন ও খাওয়ার নিজেদের পয়সা দিয়েই মেটাই। আর এ কারণে অনেকে কমমূল্যের বাসে যাতায়াত ও সস্তা খাবার খেয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রেই এটা মাঠের খেলাতেও প্রভাব পড়ার মতো ঘটনা ঘটে।’

রেফারিদের বিল বকেয়ার মধ্যে রেফারিদের উন্নয়নের জন্য ভারতীয় এক বিশেষজ্ঞ এনেছে ফুটবল ফেডারেশন। এ নিয়েও রেফারিদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, ‘যেখানে আমাদের সম্মানীর বকেয়া রয়ে গেছে, সেখানে বিদেশ থেকে বেশি পয়সায় বিশেষজ্ঞ এনে কতটুকু উন্নয়ন হবে।’

রেফারিদের বকেয়া নিয়ে সোচ্চার থাকার কথা বাংলাদেশ ফুটবল রেফারিজ এসোসিয়েশনের। সেই এসোসিয়েশনও এখন দ্বিধা-বিভক্ত। গত মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের এখনো আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা হয়নি। রেফারিং একটা নৈতিকতার পেশা হলেও রেফারিজ নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি এবং জাল ভোটের অভিযোগও ক্রীড়াঙ্গনে দেখতে পাওয়া যায়।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]