সুদূরপ্রসারী সংস্কার পাস করতে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে মিলিত হচ্ছেন দেশটির আইন প্রণেতারা। আর এর মাধ্যমে চীনের সরকার এবং অর্থনীতির ওপর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় হতে চলেছে।
এছাড়া রাবার-স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট বলে পরিচিত ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি) প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিনপিংয়ের তৃতীয় মেয়াদ এবং তার দলের শীর্ষস্থানীয়দের নিয়োগ নিশ্চিত করবে। রোববার (৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহের এই অধিবেশনে এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হবে। তিনি হবেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাবেন বর্তমানে এই পদে আসীন লি কেকিয়াং।
বিবিসি বলছে, দুই সেশনে এটি হবে বার্ষিক অধিবেশন। কিন্তু এ বছরের অধিবেশন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধিরা কমিউনিস্ট পার্টিরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার তথা পুনর্নির্মাণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া অনুসারে, বেসরকারি ব্যবসায় ‘প্রভাব বিস্তারের কাজকে আরও শক্তিশালী করার’ পাশাপাশি আর্থিক খাত এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তির কাজ তত্ত্বাবধানকারী সংস্থাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করবে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) প্রতিনিধিরা।
বিবিসি বলছে, এই ধরনের পদক্ষেপগুলো সম্ভবত চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং সরকারের মধ্যকার লাইনগুলোকে আরও অস্পষ্ট করবে এবং বেসরকারিখাতে পার্টির নিয়ন্ত্রণকে আরও দৃঢ় করবে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চলমান দুর্নীতি দমন অভিযানের মধ্যে চীনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক হাই-প্রোফাইল চীনা ব্যবসায়ীদের গুম হয়ে গেছেন। নিখোঁজ হওয়া চীনা এসব হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বশেষ ব্যক্তি ছিলেন প্রযুক্তি খাতে চীনের শীর্ষ ডিলমেকারদের একজন।
এছাড়া এই সপ্তাহের এনপিসি সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বকেও আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুমোদন করবে। এতে করে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নির্বাচিত হবেন। এর আগে জিনপিং গত বছরের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার অবস্থান সুরক্ষিত করেন।
সেসময় ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি তাকে তৃতীয় মেয়াদের জন্য চীনা প্রেসিডেন্ট হিসাবে জিনপিংকে পুনরায় নির্বাচিত করেছিল। মূলত কমিউনিস্ট চীনের প্রথম নেতা মাও সেতুং ছাড়া দলের অন্য কোনো নেতা এতদিন দায়িত্বপালন করেননি।
আর ২০১৮ সালের এনপিসি সভায় আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় থাকার মেয়াদের সীমা অপসারণের অনুমোদন দেওয়া হয়। আর এর মধ্য দিয়ে শি জিনপিং কার্যত আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার সুযোগ পেয়ে যান।
বিবিসি বলছে, এনপিসি বৈঠকের শুরুতে চীন এই বছর প্রায় ৫ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করবে বলে ঘোষণা করা হয়। যেখানে এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় ৭ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাবে বলেও জানানো হয়।
এছাড়া চলতি সপ্তাহের সম্মেলনে এনপিসি নতুন প্রিমিয়ারও নির্ধারণ করবে। চীনের প্রধানমন্ত্রীর সমতুল্য এই পদে দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তি ঐতিহ্যগতভাবে অর্থনীতি এবং শাসনের প্রশাসনিক দিকগুলো তত্ত্বাবধান করে থাকেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অন্যতম বিশ্বস্ত সহকর্মী লি কিয়াং নতুন প্রধানমন্ত্রীর এই ভূমিকা গ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও সাংহাই পার্টির সেক্রেটারি হিসাবে তিনি একটি দীর্ঘায়িত এবং বেদনাদায়ক কোভিড লকডাউন তদারকি করেছিলেন। যা কার্যত স্থানীয় চীনাদের ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল।
এছাড়া বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এই অধিবেশনেই তার শেষ বক্তৃতা দেবেন। গত বছরের অক্টোবরের তিনি পার্টি কংগ্রেসে নেতৃত্বের রদবদলের সময় ক্ষমতার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন। এর পাশাপাশি শি জিনপিংয়ের মন্ত্রিসভার সমতুল্য বলে পরিচিত পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির বাকি রাজনৈতিক নিয়োগও ঘোষণা করা হবে।
অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের প্রধান, প্রচার প্রধান এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রধানের মতো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠিক কারা আসছেন তা দেখার জন্য অনেকেই তাকিয়ে থাকবেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চীনের ক্ষমতাসীন এই দলটি বিভিন্ন পদে দায়িত্ব প্রদানের জন্য দক্ষতার পরিবর্তে শি জিনপিং এবং দলের প্রতি অনুগতদেরই বেশি অগ্রাধিকার করে থাকে।