12212

09/23/2024 শচীনের অর্ধশত বসন্ত

শচীনের অর্ধশত বসন্ত

ক্রীড়া ডেস্ক

২৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:৪১

কেউ তাকে বলেন ‘ক্রিকেটের বরপুত্র’ আবার কারও চোখে তিনি খোদ ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’। এই ঈশ্বর শব্দটায় অনেকের আপত্তি থাকতে পারে, তবে আদতে তিনি তাই। ভারতে ক্রিকেট ধর্ম হলে, ঈশ্বর তো শচীনই হবেন।

তিনি খেলা মানেই স্টেডিয়ামে জনসমুদ্র। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ম্যাথু হেইডেন একবার বলেছিলেন, ‘আমি ঈশ্বরকে দেখেছি। তিনি ভারতের হয়ে চার নম্বরে ব্যাট করেন।’ বাকিদের থেকে কোথায় আলাদা শচীন? কেন তার বিশ্বজোড়া এত প্রভাব? কেন তাকে ঘিরে এত বিস্ময়? অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের মতে, ‘বিশ্বে দু’ধরনের ব্যাটার হয়।

এক, শচীন টেন্ডুলকার। দুই, বাকি সবাই।’ব্যাট-বলের এই খেলাটির ইতিহাস লিখতে বসলে তার নামটা যে ওপরের সারিতে রাখতেই হবে। ভারতীয় এই ব্যাটিং জিনিয়াস ক্যারিয়ারজুড়ে সর্বোচ্চ ফিফটির বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন। এবার জীবনের ইনিংসেও পঞ্চাশ হাঁকালেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। তার অর্ধশত বসন্ত আজ (২৪ এপ্রিল)। ১০০ সেঞ্চুরি, ২০০ টেস্টের পর জীবনের ৫০।

শচীন টেন্ডুলকার নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত হলেও তার পুরো নাম শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল মুম্বাইয়ের মহারাষ্ট্রে শচীনের জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রমেশ টেন্ডুলকার ও মা রজনী টেন্ডুলকার। বলা হয়, রমেশ বিখ্যাত ভারতীয় সুরকার শচীন দেববর্মণের নামানুসারে তার নাম শচীন রাখেন।

শিবাজী পার্কে শ্রী রমাকান্তের হাত ধরে শুরু হয় শচীনের প্রাতিষ্ঠানিক ক্রিকেট শিক্ষা। স্কুল ক্রিকেটে খেলেছেন অনেক ম্যাচ, স্কুল থেকে পাওয়া লম্বা ছুটি কাটাতেন পুরোটাই ক্রিকেট অনুশীলন করে। যে ক্রিকেটের প্রতি তার এত ভালোবাসা জীবনের শুরু থেকেই, সেই ক্রিকেট নামক মহাকাব্যের মহানায়ক সে হবে না তো কে হবে!

একদিনের ক্রিকেটে শুরুটা মোটেও শুভ ছিল না। প্রথম দুটি ম্যাচেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। প্রথম শতরান এসেছিল ৭৯তম ম্যাচে, ৭৬তম ইনিংস! প্রথম শতরানের পরের তিনটি ইনিংসে আবার টানা শূন্য! তত দিন পাঁচ দিনের ক্রিকেটে সচিনের সাতটি শতরান হয়ে গিয়েছিল। এক দিনের ক্রিকেটে কাঙ্খিত সাফল্য পেতে তাঁর দীর্ঘ সময় লাগাও ক্রিকেট বিশ্বের আর এক বিস্ময়।

বিশ্ব ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর। বয়স তখন ১৬ বছর ২০৫ দিন। কিশোর বয়সেই মুখোমুখি হয়েছিলেন ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, ইমরান খান, আব্দুল কাদিরদের মতো পেসারদের। যাদের নামে তখন বিশ্ব ক্রিকেটের বাঘা বাঘা সব ব্যাটাররাও রীতিমতো কাঁপতেন। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫ করে থামতে হয়েছিল শচীন রমেশ টেন্ডুলকারকে। ওই ম্যাচে আর ব্যাট হাতে নামার সুযোগ পাননি লিটল মাস্টার। তবে এরপর ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ফয়সালাবাদ টেস্টে ১৭২ বল মোকাবিলা করে ৫৯ রান করে জানান দিয়েছিলেন নিজের সক্ষমতার।

টেস্ট ক্রিকেটের মতো ওয়ানডেতেও পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক। যদিও একদিনের ক্রিকেটে শুরুটা মোটেও শুভ ছিল না। প্রথম দুটি ম্যাচেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। প্রথম শতরান এসেছিল ৭৯তম ম্যাচে, ৭৬তম ইনিংস! প্রথম শতরানের পরের তিনটি ইনিংসে আবার টানা শূন্য! তত দিন পাঁচ দিনের ক্রিকেটে সচিনের সাতটি শতরান হয়ে গিয়েছিল। এক দিনের ক্রিকেটে কাঙ্খিত সাফল্য পেতে তাঁর দীর্ঘ সময় লাগাও ক্রিকেট বিশ্বের আর এক বিস্ময়।

‘৯২, ’৯৬, ’৯৯, ২০০৩, ’০৭ – টানা ৫টি বিশ্বকাপ খেলেও বিশ্বকাপটা উঁচু করে তোলা হয়নি শচীনের। আক্ষেপটা ঘোচে ২০১১ বিশ্বকাপে, বিশ্বকাপহীন তাই থাকতে হয়নি ক্রিকেট রাজ্যের রাজাকে। মাঝে ২০০৩ বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হন শচীন; ১৯৯৬ আর ২০০৩ বিশ্বকাপে ছিলেন সর্বাধিক রানসংগ্রাহক। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ চলাকালীন হারান নিজের বাবাকে। বাবার মৃত্যুতে দেশে ফিরে এসে আবারও ফিরে যান ইংল্যান্ডে; ইস্পাতদৃঢ় মনোবল নিয়ে ঠিকই খেলে যান বিশ্বকাপ, সেঞ্চুরিও হাঁকান।

ঈর্ষনীয় সব রেকর্ড দখলে বিশ্বকাপজয়ী এই মহাতারকার। ৬৬৪ আন্তর্জাতিক ম্যাচে রান ৩৪ হাজার ৩৫৭। শতরানের সেঞ্চুরি তো রয়েছেই নামের পাশে। ভারতীয় ক্রিকেটই নয়, বিশ্ব ক্রিকেট বদলে দেওয়া এই কিংবদন্তি ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন ২০১৩ সালে। কিন্তু এখনো শচীন মানেই এক আবেগের নাম।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]