24675

09/19/2024 বিএনপি নেতাকে হত্যা: ১১ বছর পর সাবেক মন্ত্রী নূরের বিরুদ্ধে মামলা

বিএনপি নেতাকে হত্যা: ১১ বছর পর সাবেক মন্ত্রী নূরের বিরুদ্ধে মামলা

নীলফামারী থেকে

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:২১

নীলফামারীর লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে হত্যার অভিযোগে প্রায় ১১ বছর পর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ আওয়ামী লীগের ৪১ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) নীলফামারী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ এ মামলাটি দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী শাহানাজ বেগম। আদালত মামলা গ্রহণ করে নীলফামারী সদর থানা পুলিশকে এফআইআরের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় আরও এক হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমান, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল হাসান শাহ আপেল, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকার প্রমুখ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলার ঘটে। সে ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতা গোলাম রব্বানীর বাড়িতে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে খুঁজতে যায়। সেখানে তাকে না পেয়ে তার পরিবারের লোকজনকে মারধর করে বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি কয়েকজন যুবক ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়৷ পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয় থানা ও ডিবি অফিসে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে ১৮ জানুয়ারি জানতে পারে নীলফামারীর আরাজী ইটাখোলা এলাকায় নীলফামারী- ডোমার সড়কের পাশে বাঁশঝাড়ে রব্বানীর মরদেহ পড়ে আছে। তা জানতে পেরে পরিবারের লোকজন মরদেহ নিয়ে এসে দাফনের প্রস্তুতি নিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আসাদুজ্জামান নূরের নির্দেশে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন।

মামলার বাদী শাহানাজ বেগম বলেন, আসাদুজ্জামান নূরের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় আমার স্বামী গোলাম রব্বানীকে আসামি করে থানায় মামলা করে। এরপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাড়িতে স্বামীকে খুঁজতে আসে, না পেয়ে আমার বাড়ি লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এমনকি আসামিরা আমার স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমার স্বামী প্রাণের ভয়ে আমার পঞ্চগড়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিজেকে আত্মগোপন করে। এরপর গত ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের ওই আত্মীয়ের বাড়িতে নীলফামারী থানা পুলিশ ও র‌্যাব পরিচয়ে আমার স্বামীকে তুলে যায়। আমি বিভিন্ন স্থানে আমার স্বামী খোঁজ করার এক পর্যায়ে নীলফামারী-ডোমার সড়কের পাশে বাঁশঝাড়ে আমার স্বামীর মরদেহ পাই। স্বামীকে হারিয়ে আমি আমার ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করেছে। আমি ছোট-ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ৬ থেকে ৭ মাস আত্মগোপনে থেকেছি। আমি আমার স্বামীর নির্মম হত্যার বিচার চাই।

এ বিষয়ে নীলফামারী সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এম আর সাঈদ বলেন, মামলাটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণের জন্য বিজ্ঞ আদালত থেকে আজকে নির্দেশনা পেয়েছি। সেটি আদালতের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে রেকর্ড করার প্রক্রিয়া চলমান আছে।

এছাড়াও গেল ৪ আগস্ট নীলফামারী জেলা বিএনপি ও সেচ্ছাসেবক দলের কার্যালয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ জেলা শহরের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজের মামলায় আসাদুজ্জামান নূরকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম বাবলা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থী সৌমিক হাসান সোহান মামলায় আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্য গুলির নির্দেশদাতা হিসেবে ১ নম্বর আসামি করা হয় সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

এদিকে গতকাল রোববার রাত ১১টায় আসাদুজ্জামান নূরকে রাজধানীর বেইলি রোডের নওরতন কলোনি থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আজ (সোমবার) তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা সিয়াম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ সময় তাদের আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]