24695

09/20/2024 নবীজির সৌন্দর্য নিয়ে বেদুইন নারীর চমৎকার বর্ণনা

নবীজির সৌন্দর্য নিয়ে বেদুইন নারীর চমৎকার বর্ণনা

ধর্ম ডেস্ক

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:১৪

মহানবী (স.) হিজরতের সময় যাত্রাপথে খোজাআহ গোত্রের তাঁবুতে কিছু সময় অবস্থান করেন। সেখানে বেদুইন নারী উম্মে মাবাদ নবীজির সৌন্দর্য, চাল-চলন, আচার-আচরণ অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন। তিনি তখনও জানতেন না- যাঁকে তিনি দেখছেন তিনি বিশ্বনবী (স.)।

যাই হোক, নবীজির প্রস্থানের পর বেদুইন নারী অচেনা লোকটি (মহানবী স.) সম্পর্কে যে বর্ণনা তাঁর স্বামীকে দিয়েছেন, তা অসম্ভব সুন্দর ও অভূতপূর্ব একটি বর্ণনা। নিচে তা তুলে ধরা হলো-

নারী সাহাবি উম্মে মাবাদ রাসুলুল্লাহ (স.) সম্পর্কে বর্ণনা করেন, ‘তাঁর উজ্জ্বল বদনকান্তি, প্রফুল্ল মুখশ্রী, অতি ভদ্র ও নম্র ব্যবহার। তাঁর উদরে স্ফীতি নেই, মস্তকে খালিত্য নেই। সুন্দর, সুদর্শন। সুবিস্তৃত কৃষ্ণবর্ণ নয়নযুগল, কেশ দীর্ঘ ঘনসন্নিবেশিত। তাঁর স্বর গম্ভীর। গ্রিবা উচ্চ। নয়নযুগলে যেন প্রকৃতি নিজেই কাজল দিয়ে রেখেছে। চোখের পুতুলি দুটি সদা উজ্জ্বল, ঢল ঢল। ভ্রূযুগল নাতিসূক্ষ্ম, পরস্পর সংযোজিত। স্বতঃকুঞ্চিত ঘন কেশদাম। মৌনাবলম্বন করলে তাঁর বদনমণ্ডল থেকে গুরুগম্ভীর ভাবের অভিব্যক্তি হতে থাকে।

আবার কথা বললে মনপ্রাণ মোহিত হয়ে যায়। দূর থেকে দেখলে কেমন মোহন কেমন মনোমুগ্ধকর সে রূপরাশি, নিকটে এলে কত মধুর কত সুন্দর তাঁর প্রকৃতি। ভাষা অতি মিষ্ট ও প্রাঞ্জল, তাতে ত্রুটি নেই, অতিরিক্ততা নেই, বাক্যগুলো যেন মুক্তার হার। তাঁর দেহ এত খর্ব নহে যা দর্শনে ক্ষুদ্রত্বের ভাব মনে আসে বা এমন দীর্ঘ নহে যা দেখতে বিরক্তি বোধ করে, তিনি নাতিদীর্ঘ নাতিখর্ব। পুষ্টি ও পুলকে সে দেহ যেন কুসুমিত নববিটপীর সদ্য পল্লবিত নবীন প্রশাখা। সে মুখশ্রী বড়ই সুন্দর, বড়ই সুদর্শন ও সুমহান। তাঁর সঙ্গীরা সর্বদাই তাঁকে বেষ্টন করে থাকেন। তাঁরা তাঁর কথা আগ্রহ সহকারে শ্রবণ করেন এবং তাঁর আদেশ উৎফুল্ল চিত্তে পালন করেন।’

স্ত্রীর মুখে এই বর্ণনা শুনে আবু মাবাদ উত্তেজিত স্বরে বলে উঠলেন- وَاللهِ هَذَا صَاحِبُ قُرَيْشٍ ... لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَصْحَبَهُ وَلَأَفْعَلَنَّ إِنْ وَجَدْتُ إِلَى ذَلِكَ سَبِيْلاً ‘আল্লাহর কসম! ইনিই কুরায়েশদের সেই মহান ব্যক্তি, যার সম্পর্কে লোকেরা নানা কথা বলে থাকে। আমার দৃঢ় ইচ্ছা আমি তাঁর সাহচর্য লাভ করি এবং সুযোগ পেলে আমি তা অবশ্যই করব।’ (পরে তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন)

ঘটনাটি বিখ্যাত সিরাতগ্রন্থ আর রাহিকুল মাখতুম থেকে নেওয়া হয়েছে। ঘটনা বর্ণনায় সেখানে বলা হয়, ১২ সেপ্টেম্বর মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশে হিজরত শুরু করেন নবীজি। ২৩ সেপ্টেম্বর ৬২২ সাল মোতাবেক ৮ রবিউল আওয়াল মদিনার পার্শ্ববর্তী কোবায় পৌঁছান। যাত্রাপথে একাধিক ঘটনার মধ্যে একটি হলো- খোজাআহ গোত্রের উম্মে মাবাদের তাঁবুতে অবস্থান ও অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ। খোজাআহ গোত্রের বিখ্যাত অতিথিপরায়ণ মহিলা উম্মে মাবাদের তাঁবুর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, পানাহারের কিছু আছে কি-না? ওই মহিলার অভ্যাস ছিল তিনি তাঁবুর বাইরে বসে থাকতেন মেহমানের অপেক্ষায়। মেহমান পেলে তাকে কিছু খাওয়াতেন। কিন্তু সেদিন এমন হয়েছিল যে, বাড়িতে পানাহারের মতো কিছুই ছিল না। তখন দুর্ভিক্ষের সময় চলছিল। বকরিগুলো সব মাঠে নিয়ে গেছে তার স্বামী আবু মাবাদ। একটি বকরি বেশি দুর্বল হওয়ার কারণে মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সেটি তাঁবুর এক কোণে বাঁধা ছিল।

রাসুলুল্লাহ (স.) সেটি থেকে দুধ দোহন করার অনুমতি চাইলেন। উম্মে মাবাদ বললেন, ওর ওলানে কিছু থাকলে আমিই আপনাদের দোহন করে দিতাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (স.) অনুমতি পেয়ে বকরিটির ওলানে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে হাত রাখলেন ও বরকতের দোয়া করলেন। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর ইচ্ছায় বকরিটির ওলান দুধে পূর্ণ হয়ে গেল। তারপর তিনি দোহন করতে থাকলেন। তাতে দ্রুত পাত্র পূর্ণ হয়ে গেল। প্রথমে বাড়িওয়ালী উম্মে মাবাদকে পান করালেন। তারপর সঙ্গীদের এবং সবশেষে রাসুলুল্লাহ (স.) নিজে পান করলেন। এরপরে এক পাত্র পূর্ণ করে উম্মে মাবাদের কাছে রেখে তাঁরা পুনরায় যাত্রা করলেন। অল্পক্ষণ পরেই আবু মাবাদ বাড়িতে ফিরলেন এবং সব ঘটনা শুনে অবাক হয়ে গেলেন।

সেসময় উম্মে মাবাদ তাঁর স্বামীকে নবীজি দেখতে কেমন এবং তাঁর কাফেলা সম্পর্কে উল্লেখিত বর্ণনাটি দিয়েছিলেন। (সূত্র: আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃ-১৭০, জাদুল মায়াদ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৪)

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]