26912

04/21/2025 আইন করে এমপি-মন্ত্রীদের দেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করার দাবি

আইন করে এমপি-মন্ত্রীদের দেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:২১

এমপি-মন্ত্রীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ ভিআইপিদের বাংলাদেশে চিকিৎসা নেওয়ায় বাধ্যবাধকতা আরোপের দাবি জানিয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি বলেন, এমপি-মন্ত্রীরা দেশে চিকিৎসা নেয় না বলেই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয় না। তাই প্রয়োজনে আইন করেই তাদেরকে বাংলাদেশের চিকিৎসা নিতে বাধ্য করতে হবে।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ৪২তম বিশেষ বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগবঞ্চিত চিকিৎসকদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্তা-ব্যক্তিরা কিছু হলেই ডাক্তার দেখাতে বিদেশ চলে যান। এই দেশের নাগরিক হয়ে আরেক দেশে চিকিৎসা করাতে যারা চলে যায়, এমনকি যাওয়া এবং আসার সময়ে আবার গণমাধ্যমে ঢাক-ঢোল পেটায়, তাদের কি বিন্দু পরিমাণ লজ্জা হয় না? এরকম একটা নির্লজ্জ রাষ্ট্রব্যবস্থা স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আমরা পেয়েছি। কোনো রাজনৈতিক নেতারাই এজন্য লজ্জিত না। তারা স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যাবে অথচ কখনোই ঢাকা মেডিকেলে যাবে না। তারা মরার জন্য থাইল্যান্ড চলে যাবে, ভারত-ব্যাংককে চলে যাবে তবুও দেশের স্বাস্থ্যখাতকে তারা ভালো করবে না।

তিনি বলেন, দেশের সব হর্তাকর্তা, ভিআইপিসহ সব রাজপুত্র-রাজকন্যাকে ঢাকা মেডিকেল এবং পিজি হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করতে হবে। তাহলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে। প্রয়োজনে আইন করার মাধ্যমে এসব ব্যক্তিদের দেশে চিকিৎসা নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া কখনই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।

বিশিষ্ট এই আইনজীবী বলেন, যতদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক ব্যক্তি-আমলাসহ কর্তাব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়া অ্যালাউ করবেন, ততদিন পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ভালো হতে দেবে না। কারণ তারা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বিশ্বাসই করে না। তাদের কারণে দেশের সাধারণ মানুষও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে।

দেশের চিকিৎসার ব্যবসার উন্নয়নে মিডিয়ার ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অসংখ্য মিডিয়াতেই দেখবেন কিছুদিন পরপর নিউজ হয় ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা বদলে গেল, উন্নত হয়ে গেল, বিশ্বমানের হয়ে গেল। এই সংবাদগুলো বাংলাদেশের কিছু ভিডিও পরিকল্পিতভাবে করে থাকে। তার তারাই বাংলাদেশের চিকিৎসা নিয়ে নিউজ করে সম্পূর্ণ বিপরীত। বিনা চিকিৎসা মারা গেল, ভুল চিকিৎসা শিকার হলো-এই নিউজগুলো বাংলাদেশ নিয়ে নিয়মিত আপনারা দেখবেন। একটা ছোট দুর্ঘটনা ঘটলে দশটা মিডিয়া প্রথম পাতায় বড় করে নিউজ করে দেয়। এগুলো পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর অনাস্থা তৈরি করতেই করা হয়ে থাকে। তাই আমি মিডিয়াকর্মীদের আহ্বান করব, নিজেদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার উন্নয়নের কথা ভেবে আমাদের মূল সমস্যাগুলো তুলে ধরুন এবং সংস্কারে সহযোগী ভূমিকা পালন করুন।

ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, দেশের মোট বাজেটের ১০ থেকে ১২ শতাংশ বরাদ্দ স্বাস্থ্যখাতের জন্য রাখা উচিত। কিন্তু আমরা কখনোই ৩ থেকে ৪ শতাংশের বেশি দেখতে পাচ্ছি না। একটা রাষ্ট্রকে যদি সেবার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, সেখানে জিডিপির ন্যূনতম ৫ থেকে ৭ শতাংশ স্বাস্থ্য কাদের জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত। ব্রিটেনসহ উন্নত দেশগুলোতে দেখেছি এই খাতে বরাদ্দ ১০ থেকে ১২ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এই জায়গাতে ৫৩ বছর ধরে রাষ্ট্র যারা চালিয়েছেন, তাদের মধ্যে সেবা খাতটাকে রাষ্ট্রের উপযোগী করার সদিচ্ছার অভাব আমরা দেখেছি এবং দেখতে পাচ্ছি।

দেশে চিকিৎসক সংকটের কথা উল্লেখ করে এ রাজনীতিবিদ আরও বলেন, চিকিৎসক সংকটে আমাদের উপজেলা হাসপাতালগুলোতে যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না। তাই ৪২ বিসিএসে যে ভাই-বোনরা টিকে গেছেন ৪৩, ৪৪, ৪৭, ৪৯তম বিসিএসের নাটক না করে দ্রুত দেশের স্বার্থে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করুন।

সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও এবি পার্টির আহ্বায়ক মেজর (অব.) অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওহাব মিনার, ৪২তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত চিকিৎসক ডা. মো. রেজওয়ান কবীর, ডা. ফাতেমা আক্তার, ডা. আশিক আহমেদসহ আরও অনেকে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]