বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার, অস্ত্র ব্যবসা এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যকলাপের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষ, যারা প্রতিদিনকার জীবনে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের মুখোমুখি হচ্ছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে একটি কার্যকর পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছিল। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বাহিনী ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে একটি মেগা অপারেশন চালু করেছে, যা অপরাধ দমনে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
অপারেশনটি চালু হওয়ার পর থেকে একদিকে যেমন অপরাধীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি অপরাধ দমনে সরকারের শক্ত অবস্থানও ফুটে উঠেছে। এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত যেখানে দেশের নিরাপত্তা এবং শান্তির জন্য সরকার দৃঢ়ভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত হয়েছে।
অপারেশন ডেভিল হান্টের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ মূলত তিনটি প্রধান উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে—১. সন্ত্রাসী চক্র ও আন্তর্জাতিক অপরাধীদের দমন। ২. মাদক পাচার ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। ৩. সীমান্তে চোরাচালান রোধ।
এটি মূলত বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে। অপারেশনটির লক্ষ্য হচ্ছে, দেশের নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের শিকড় উপড়ে ফেলা। মিশনটির মাধ্যমে সরকার দৃঢ়ভাবে দেখাতে চায় যে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো রকম আপস করবে না এবং দেশের জনগণের নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
অপারেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি শুধু বাহ্যিক অপরাধীদেরই টার্গেট নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ অপরাধী চক্রগুলোও চিহ্নিত ও দমন করতে চায়। মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী—সব ধরনের অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে অব্যাহত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা কী ছিল? : বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন এক সময় এসেছে, যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে অবনতির দিকে গেছে। সন্ত্রাসবাদী হামলা, অপরাধী চক্রের অত্যাচার, চাঁদাবাজির মতো নানা অপরাধের কারণে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন ছিল।
বিশেষত, শহরাঞ্চলে নারী-শিশু নির্যাতন, মাদকসেবন, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। এসব কারণে জনগণ দীর্ঘদিন ধরে এক কার্যকরী পদক্ষেপের অপেক্ষায় ছিল, যা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং অপরাধ দমনে সরকার দৃঢ় অবস্থান নেবে। এ অবস্থায়, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
অপারেশনটির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে যে, সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। জনগণ এই অভিযানের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেছে।
যতটা গুরুত্বপূর্ণ এই অপারেশনটির লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং তাদের হয়রানি থেকে রক্ষা করা। এই ধরনের অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনো কখনো অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে পারে, যা সাধারণ জনগণের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তবে, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করার সময় কর্তৃপক্ষ দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, সাধারণ মানুষ যেন এই অভিযান থেকে বিরক্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষভাবে সতর্ক রয়েছে যেন এই অভিযানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনে কোনো ধরনের অনাবশ্যক দুঃখ-কষ্ট বা ভোগান্তি না আসতে পারে। তাদের লক্ষ্য হলো অপরাধী চক্রের শিকড় উপড়ে ফেলা, কিন্তু তেমনভাবে সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখা।
তাই, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর কার্যক্রমে মানবাধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি, বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বাহিনী স্থানীয় জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে এবং জনগণের উদ্বেগ ও সমস্যাগুলো নিরসনে কাজ করছে।
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ইতিমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। অভিযানের প্রথম সপ্তাহেই একাধিক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মাদক পাচারকারী চক্রের কয়েকটি সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্ত্র পাচার ও চোরাচালান রোধে অভিযান চালানো হয়েছে। বিশেষ করে, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযানে ব্যাপক সাফল্য এসেছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়েছে।
অপারেশনটি শুধু অপরাধীদের বিরুদ্ধে নয়, বরং সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেও কাজ করেছে। নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, আলোচনা সভা এবং প্রচারাভিযানের মাধ্যমে জনগণকে জানিয়ে দিয়েছে যে, এই অভিযান দেশের সুরক্ষা ও শান্তির জন্য অপরিহার্য এবং জনগণের সহযোগিতা কাম্য। পাশাপাশি, এটি অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের আশ্বাসও দিয়েছে।
অপারেশনটির আওতায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে মাদক, অস্ত্র পাচারকারী, সন্ত্রাসী এবং অপরাধী চক্রের সদস্যদের অবস্থানস্থলে। এর ফলে দেশজুড়ে অপরাধ কমাতে সহায়ক হয়েছে।
যতটা প্রয়োজনীয় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’, ততটাই প্রয়োজন তার সঠিক বাস্তবায়ন, যাতে সাধারণ মানুষ এই অভিযানে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা রাখার জন্য অপরাধীদের গ্রেফতার করতে গিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা নিরপরাধ নাগরিকদের ক্ষতি হওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।
সন্ত্রাসী ও অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন, তবে সেটা যেন কোনোভাবেই সাধারণ জনগণের ওপর জুলুম না হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারে সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কঠোর অবস্থান পোষণ করছে এবং জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর মূল লক্ষ্য অপরাধ দমন, আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা। এই অপারেশন জনগণের সহানুভূতির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হচ্ছে, যাতে জনগণের অধিকার সুরক্ষিত থাকে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ বাংলাদেশে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এই অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাসী, মাদক পাচারকারী এবং অন্যান্য অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে এক দৃঢ় বার্তা পাঠানো হয়েছে, তবে এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
সুতরাং, এই অভিযানটি সফল হতে হলে নিরাপত্তা বাহিনীকে মানুষের প্রতি তাদের দায়িত্ব সতর্কতার সঙ্গে পালন করতে হবে, যেন অপরাধীরা দমন হয় এবং সাধারণ মানুষের শান্তি বজায় থাকে। যেহেতু এই অভিযান দেশব্যাপী সমর্থন পাচ্ছে, তাই সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করা সম্ভব হবে। অপারেশন ডেভিল হান্ট যদি সফল হয়, তাহলে এটি বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে, যা দেশের নিরাপত্তা এবং শান্তির জন্য দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
মীর আব্দুল আলীম ।। সাংবাদিক