30113

03/13/2025 পাকিস্তানে ট্রেন ছিনতাইয়ের পেছনে রাষ্ট্রীয় শক্তির জড়িত থাকা নিয়ে সন্দেহ

পাকিস্তানে ট্রেন ছিনতাইয়ের পেছনে রাষ্ট্রীয় শক্তির জড়িত থাকা নিয়ে সন্দেহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১২ মার্চ ২০২৫ ১৬:১৩

আধুনিককালের ইতিহাসে ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘটনা খুবই বিরল। বিশ্বে এখন পর্যন্ত সফল ট্রেন ছিনতাইয়ের যে ঘটনাটি জানা যায়, সেটি ঘটেছিল ১৯৭৭ সালে মলুক্কান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মাধ্যমে।

পাকিস্তানে ট্রেন ছিনতাইয়ে যুক্ত দ্য বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) কৌশলগত লড়াই মূলত গেরিলা যুদ্ধকে ঘিরে আবর্তিত। এ লড়াইয়ের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হলো ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), গেরিলা হামলা ও বিক্ষিপ্ত নাশকতা।

চলন্ত ট্রেন ছিনতাই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—নিখুঁত সময়, রেল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত গোয়েন্দা তথ্য ও ত্রুটিহীন লজিস্টিক সিঙ্ক্রোনাইজেশনের ওপর নির্ভরশীল।

বিএলএ তার ২৫ বছরের বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াইয়ে এত উন্নত কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সক্ষমতা বা এই মাত্রার গতিশীল অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রদর্শন করেনি।

ট্রেন ছিনতাই এমন এক অসংগতিপূর্ণ ঘটনা, যেখানে অসমযুদ্ধের রীতি উপেক্ষা করা হয়ে থাকে। এ অসংগতি বাইরের সহায়তার দিকে ইঙ্গিত করে। এ সহায়তা সম্ভবত এমন কোনো রাষ্ট্রীয় পক্ষ থেকে এসেছে; যাদের মিশন পরিচালনার উন্নত পরিকল্পনা, তথ্যানুসন্ধান ও মিশন কার্যকর করার সুযোগ রয়েছে।

একটি চলন্ত ট্রেনের প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় এবং এর গতি ও ঝুঁকি নির্ধারণে তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন। তবে বিএলএ এমন সক্ষমতা থেকে অনেক দূরে বলেই মনে করা হচ্ছে। স্যাটেলাইটে ধারণ করা দৃশ্যের সহায়তা ছাড়াই কি তাহলে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছে।

বিএলএর মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো নির্ভর করে স্থানীয় ও মাঠপর্যায়ের তথ্যের ওপর। আর রাষ্ট্রীয় শক্তির হাতে থাকে সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স (এসআইজিআইএনটি) এবং হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স (এইচইউএমআইএনটি) নেটওয়ার্কের অত্যাধুনিক ভান্ডার। জাফর এক্সপ্রেসে হামলার স্থানগত নির্ভুলতা এ ঘটনায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অধীন কোনো না কোনো স্তরের নজরদারি থাকার ইঙ্গিত দেয়।

প্রত্যন্ত টানেলে ট্রেন, তা–ও এমন একটি ট্রেন যা চলন্ত অবস্থায় রয়েছে ও জনপদ থেকে বহুদূরে, সেটি ছিনতাই করার সঙ্গে জড়িত অনেক কিছু। যেমন এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পরিবহনকর্মী, অস্ত্রশস্ত্রের জোগান, কর্তৃপক্ষের নজরদারি এড়িয়ে বিস্ফোরক সরবরাহ করা ইত্যাদি। আরও যুক্ত আছে উল্লেখযোগ্য পূর্বপ্রস্তুতি, সরবরাহ শৃঙ্খল, সামরিক স্তরের যানবাহন ও লজিস্টিকস সমর্থন। অথচ এর সবই বিএলএর সক্ষমতার বাইরে।

বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ ও সুড়ঙ্গে অভিযান চালানোর কৌশল রপ্ত করা না থাকলে জাফর এক্সপ্রেসে এমন হামলা চালানো সম্ভব হতো না।

২৫ বছর ধরে বিএলএ স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে নিশানা বানিয়ে আসছে। পাকিস্তানি নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদ হিসেবে তারা হামলা করে আসছে বিভিন্ন অবকাঠামোতে। জনপদ থেকে ২৫ মাইল দূরে সুড়ঙ্গের ভেতর ট্রেনকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর ফলে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চালানো বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসব বিষয় বিএলএর স্বাভাবিক লক্ষ্যের সঙ্গে কম ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কৌশলগত লক্ষ্যের সঙ্গে বেশি সংগতিপূর্ণ। বিএলএ একটি সুবিধাজনক ফ্রন্ট হতে পারে। কিন্তু যেভাবে ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা একটি বৃহত্তর অ্যাজেন্ডার দিকে ইঙ্গিত করে; যার জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের লক্ষ্য ও দূরদর্শিতা।

বিএলএ হামলার দায় স্বীকার করেছে ঠিক। কিন্তু এটি নিশ্চিত, এ ঘটনায় একটা প্রক্সি যুদ্ধের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কেননা, রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলো অনেক সময় নানা উপকরণ সরবরাহ করে ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করে।

বিএলএর একা এ ঘটনা ঘটানোর সক্ষমতা থাকার বিষয়টি সন্দেহজনক। কোনো না কোনো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক অবশ্যই গোয়েন্দা তথ্য, প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সরবরাহ করেছিল। এরপর বিএলএ যখন কৃতিত্ব নিল, তখন তারা পিছিয়ে গেল।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]