30188

03/15/2025 গোয়ালন্দে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে কোটি টাকার বালু উত্তোলন

গোয়ালন্দে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে কোটি টাকার বালু উত্তোলন

রাজবাড়ী থেকে

১৫ মার্চ ২০২৫ ১২:২৪

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় পদ্মা নদীতে একাধিক কাঁটার মেশিন (ড্রেজার) দিয়ে রাত-দিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে টোকেনের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছে প্রভাবশালী এক মহল।

ক্ষমতার দাপট দেখাতে বালু উত্তোলনের অন্তরালে চলছে অস্ত্রের মহরা। অস্ত্রধারী এক গ্রুপ পাহারা দিয়ে বালু উত্তোলন করে থাকে। দিন-রাত দফায় দফায় পদ্মা নদীর একাধিক জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকায় রয়েছে। এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়া ও উজানচর এলাকার সীমান্তবর্তী পদ্মা নদীতে একাধিক কাঁটার মেশিন (ড্রেজার) রয়েছে। পাশে অসংখ্য বাল্কহেড নোঙ্গর করা রয়েছে। কাঁটার মেশিনের সঙ্গে নোঙ্গর করা অবস্থায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ছোট-বড় দুই শতাধিক বাল্কহেড দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ফুট বালু বিভিন্ন জেলায় টোকেনের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে। অপরিচিত কেউ গেলে অস্ত্রধারী এই গ্রুপ স্পিড বোর্ড নিয়ে তাদের ধাওয়া করে থাকে। যে কারণে কেউ বালু উত্তোলন এলাকায় চাওয়ার সাহস পায় না। গেলেও কেউ ছবি তুলতে পারে না।

এদিকে, পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর হ্রাস, তীরবর্তী ভূমি ক্ষয় এবং মিঠা পানির মাছের বিলুপ্তি ঘটছে। এতে স্থানীয় আবাদি জমি বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে।

এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষে আসলাম প্রামানিক নামে একজন গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের চরমহিদাপুর এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মো. আলম গং এর নেতৃত্বে একাধিক লোড ড্রেজার স্থাপন করে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

মো. আসলাম প্রামাণিক বলেন, দিনের আলো ও রাতের অন্ধকারে প্রতিদিন নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও নৌ পুলিশকে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু বালু উত্তোলন আজ পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। বাধ্য হয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এভাবে প্রতিনিয়ত পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন হলে নদী ভাঙনের কবলে পড়বে এলাকা। এতে শত শত হেক্টর আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ‘এশিয়ান বিল্ডার্স’ এর প্রোপাইটর আবিদ হাসান বিপ্লবের নামে হরিরামপুর উপজেলার ‘লেছড়াগঞ্জ বালু মহল’ এক বছরের জন্য ১১ কোটি ১১ লাখ ১১ হাজার ১১ টাকায় ইজারা দিয়েছে। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১০ শতাংশ আয়করসহ মোট ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৮৮ হাজার ৮শত ৮০ টাকা। কিন্তু ‘এশিয়ান বিল্ডার্স’ ইজারা আইন উপেক্ষা করে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা চরমহিদাপুর এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ২ শতাধিক বাল্কহেড বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতি বাল্কহেড ৮ হাজার ফুট থেকে ১২ হাজার ফুট নিয়ে যাচ্ছে। সেই হিসেবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। টোকেনের মাধ্যমে প্রতি ফুট বালু ৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ফরিদপুর অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ‘লেছড়াগঞ্জ বালু মহল’ ইজারা নিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ প্রতিনিয়ত নদীতে টহল দিচ্ছে। তবে রাজবাড়ী অথবা ফরিদপুর জেলার পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি একাধিকবার মোবাইল ফোনে জানতে পেরেছি রাজবাড়ী জেলার মধ্যে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্ত সরেজমিন দেখা যায়নি।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান বলেন, বালু উত্তোলন হচ্ছে এমন সংবাদ শুনেছি। মানিকগঞ্জ-ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার সীমান্ত এলাকা হওয়ার কারণে এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। যেখান থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে সেটা মানিকগঞ্জ-ফরিদপুর নাকি রাজবাড়ী জেলা। তবে আমরা খুব তাড়াতাড়ি নদীর মধ্যে গিয়ে সীমানা নির্ধারণ করবো।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তারের কাছে বালু মহলের বিষয়ে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, যত বড় প্রভাবশালী হোক অবৈধভাবে জেলার মধ্যে পদ্মা নদী থেকে এক ফুট বালু উত্তোলন করতে পারবে না। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]