শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে এশিয়ান জোনাল ৩.২ দাবা চ্যাম্পিয়নশীপে মহিলা বিভাগে বাংলাদেশের ফিদে মাস্টার ওয়াদিফা আহমেদ শুরু থেকেই শিরোপা দৌড়ে ছিলেন। কখনো এককভাবে আবার কখনো লঙ্কান দাবাড়ু ওশিনির সঙ্গে যৌথভাবে। আজ শেষ রাউন্ডে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রাণী হামিদের সঙ্গে ড্র করে এক সঙ্গে তিন প্রাপ্তি টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন, পরবর্তী মহিলা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ ও মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার নিশ্চিত হয়েছে।
ওয়াদিফা কলম্বো বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন,‘ওশিনিকে আমি হারিয়েছি। শেষ রাউন্ডে ওশিনি জিতলেও টাইব্রেকে আমার চ্যাম্পিয়নশীপ নিশ্চিত। এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বিশ্বকাপেও খেলব এবং মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টারও হলাম। অসাধারণ লাগছে সব কিছু মিলিয়ে।’
মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার হতে ২২০০ রেটিং ও তিনটি নর্ম প্রয়োজন হয়। ওয়াদিফা গত বছর হাঙ্গেরীতে একটি মহিলা আইএম নর্ম পেয়েছিলেন। এশিয়ান জোনাল বা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ফিদে মাস্টার কেউ চ্যাম্পিয়ন হলে সরাসরি আইএম টাইটেল খেতাব পাওয়া যায়। এতে নর্ম পূরণের শর্ত থাকে না আবার রেটিংও ২২০০’র পরিবর্তে ২০০০ হলেই হয়। ওয়াদিফার রেটিং এখন ২০৯১ ফলে তার মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার টাইটেল পাওয়ায় কোনো বাধা নেই। বছর দু’য়েক আগে জান্নাতুল ফেরদৌস জোনালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টারের যোগ্যতা অর্জন করলেও কাঙ্খিত ২০০০ নর্ম না পাওয়ায় এখনো তিনি খেতাব পাননি।
১৯৮৫ সালে মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার হয়েছিলেন রাণী হামিদ। দুই যুগ পর সেই খেতাব পেয়েছিলেন শামীমা সুলতানা লিজা। বছর ছয়েক আগে শিরিন সুলতানা হয়েছিলেন দেশের তৃতীয় আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার। আজ এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ পেল চতুর্থ মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার।
প্রথম তিন জন গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারেননি সেই অভাব ঘুচতে চান দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ওয়াদিফা আহমেদ,‘আমার প্রাথমিক লক্ষ্য দেশের প্রথম মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া। এর পরের লক্ষ্য গ্র্যান্ডমাস্টার। আমি লক্ষ্যপূরণে শতভাগ চেষ্টা করব।’ মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার হতে হলে ২৪০০ রেটিং ও তিনটি মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম প্রয়োজন। গ্র্যান্ডমাস্টার হতে ২৫০০ রেটিং ও তিনটি গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম লাগে।
ওয়াদিফার বড় বোন ওয়ালিজাও দাবাড়ু। তারা দুই বোনই জুনিয়র মহিলা দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সর্বশেষ দুই আসরে। বড় বোন ওয়ালিজার আগে ছোট বোন ওয়াদিফা মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার হলেন। বড় বোন নিয়ে ছোট বোনের বক্তব্য,‘আমরা দুই জনই আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার হওয়ার দৌড়ে ছিলাম। আমি হলাম , সেও হবে সামনে।’
ওয়াদিফা সর্বশেষ জাতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়ন হিসেবে জুনিয়র বিশ^কাপে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। মন্টেনেগ্রোতে অনুষ্ঠেয় সেই প্রতিযোগিতায় ওয়াদিফা খেলতে পারেননি ভিসা জটিলতায়। সেই বিষন্নতা খানিকটা কেটেছে এশিয়ান জোনালে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপ ও মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার টাইটেল পাওয়ায়। মহিলা বিভাগে বাংলাদেশের শিরোপা নিশ্চিত হলেও উন্মুক্ত বিভাগের জন্য লড়ছেন নীড়-ইমন। ঐ বিভাগেও আন্তর্জাতিক মাস্টার অথবা আইএম নর্ম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।