ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের পশ্চিম চরবর্ণি গ্রামের মো. রবিউল মোল্লা (৩৫) নামে এক ভারসাম্যহীন যুবক বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরে দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর মাটির গর্তে বসবাস করছেন।
তিন ভাইয়ের মধ্যে রবিউল বড়। তিনি ওই গ্রামের ভ্যানচালক মো. নুরুল মোল্যার ছেলে। রবিউলের মেজো ভাই ইমরান মোল্যা ভ্যানচালক ও ছোটভাই এনামুল মোল্যা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে।
স্থানীয়রা জানান, বাড়ির চারচালা একটি টিনের ঘরের মধ্যে মাজায় শেকল লাগানো রবিউলের। প্রায় প্রতিনিয়ত হাতের নখ দিয়ে মাটি খুঁড়ছেন তিনি। প্রায় ৬ ফুট গভীর গোলাকার মাটির গর্তে ১৮ বছর চলছে তার জীবন। শেকলবন্দি জীবনে রবিউল নিজেই তৈরি করেছেন নিজের থাকার মাটির ঘর। পরিত্যক্ত এই টিনের ঘরটি প্রায় ২৮ ফুট লম্বা ও ৮ ফুট চওড়া।
পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, রবিউলের বয়স তখন প্রায় ৮ বছর। ওই সময় তার জ্বর হয়েছিল। অসুস্থতার পর আস্তে আস্তে তার হাত-পা শুকিয়ে যেতে থাকে। পরিবারের সাধ্যমতো কবিরাজ ও ডাক্তার সব দেখানো হলেও আর সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি সে। শীত-গরম কোনো অনুভূতিই সে টের পায় না। শরীরে তাই কখনই কাপড় রাখে না রবিউল।
রবিউলের বাবা মো. নুরুল মোল্লা বলেন, রবিউল অসুস্থ হওয়ার পর তার ওজনের সমান টাকা ফেলেও তারে আর ভালো করতে পারি নাই। এহন আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিছি।
তিনি জানান, শেকল খুলে দিলে রবিউল পুরো বাড়ি ভাঙচুর ও তছনছ করে। এদিক-ওদিক হারিয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে মনে না মানলেও প্রায় ১৮ বছর ধরে ওকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখছি।
রবিউলের ছোটভাই ইমরান মোল্লা বলেন, ছোটবেলায় বড়ভাই আমাকে সাইকেল চালানো শিখিয়েছিল। সেই স্মৃতি আমি এখনো ভুলি নাই।
এ ব্যাপারে ময়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির মো. সেলিম বলেন, অসুস্থ রবিউলের বিষয়টি আমার জানা আছে। কিন্তু পরিবারটি কখনো আমাদের কাছে আসে নাই, বিধায় কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। রবিউলের চিকিৎসায় বড় অংকের টাকা প্রয়োজন কিন্তু আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে এ ধরনের কোনো তহবিল নেই।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রবিউলের নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড আছে।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ বলেন, ফেসবুকে শেকলবন্দি ওই যুবকের খোঁজ পেয়ে ইতোমধ্যেই ব্যক্তিগত তহবিল থেকে পরিবারটিকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও সরকারি খাদ্য সহায়তা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এলাকাটি মধুমতির নদীর পাশে। এ উপজেলার শেষপ্রান্তে হওয়ায় ঘটনাটি আগে আমাদের নজরে আসেনি বা কেউ জানায়নি। পরবর্তীতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মানসিক ভারসাম্যহীন রবিউলের চিকিৎসায় বড় ধরনের অর্থ সহায়তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।