30476

03/26/2025 সুন্দরবনে নতুন এলাকায় ফের ধোঁয়ার কুণ্ডলী

সুন্দরবনে নতুন এলাকায় ফের ধোঁয়ার কুণ্ডলী

বাগেরহাট থেকে

২৩ মার্চ ২০২৫ ১২:৪৪

বনবিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের রাতভর চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ির এলাকার আগুন। তবে ঘটনাস্থল থেকে উড়ানো ড্রোনে দেখা যাচ্ছে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নতুন করে বড় এলাকাজুড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী।

সংবাদকর্মীরা রোববার (২৩ মার্চ) সকাল পৌনে ৯টার দিকে ড্রোন উড়িয়ে ওই ধোঁয়া দেখতে পান। পরে সাড়ে ৯টার দিকে গুলিশাখালী বন টহল ফাঁড়ির অন্তত তিনটি এলাকায় আগুনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে বন বিভাগও।

৮৮৭ মিটার দূরে তিন-চারটি স্পটে বিক্ষিপ্তভাবে ধোঁয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন বন বিভাগের এক কর্মকর্তা। সেখানে দ্রুত ধোঁয়া বাড়ছে বলেও জানান তিনি। তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট বন অফিসগুলোকে ঘটনাস্থলের দিকে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে, শনিবার সকালে কলমতেজী টহল ফাঁড়ির টেপার বিল এলাকায় আগুনের ধোঁয়া দেখতে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বন বিভাগকে জানায়। দুপুর থেকে বন বিভাগ, সিপিজি, ভিটিআরটি, টাইগার টিমের শত শত লোকজন কাজ শুরু করেন। বিকেলের মধ্যে ফায়ার লাইন কাটা শেষ করে বন বিভাগ। সন্ধ্যার আগে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গেলেও পানি দিতে পারেনি। পানি থেকে ঘটনাস্থল বেশি দূরে হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়।

এদিন রাত ৯টা থেকে বন বিভাগের নিজস্ব পাম্প ও পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি দেওয়া শুরু করে জানিয়ে ধানসাগর স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা বপুলেশ্বর দেবনাথ বলেন, বিকেলের আগেই আমরা ফায়ার লাইন কাটা শেষ করি। বনবিভাগের পাম্প ও নিজের পাইপলাইনও স্থাপন করি। তবে আগুনের এলাকা পর্যন্ত পৌঁছানো যায়নি।

তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে পাইপ ধার করে সন্ধ্যা থেকে আমরা কাজ শুরু করি। পাইপ দিয়ে রাত ৯টা দিয়ে পানি ছেটানো শুরু করে বনবিভাগ। বনবিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকের অর্ধশতাধিক লোক রাতভর চেষ্টা ভোর ৪টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এরও আগে, শনিবার দুপুর থেকে শত শত বনবিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নিয়ন্ত্রণে কোদালের সাহায্যে ফায়ার লাইন কাটার পাশাপাশি কলসি, বালতিতে করে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করে।

এদিকে, আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন—ধানসাগর স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দাস ও কলমতেজি টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে ওই কমিটিকে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান ও বনভূমির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খুলনা ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) সাকরিয়া হায়দার বলেন, বাগেরহাট, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ নিয়ে মোট পাঁচটি ইউনিট সুন্দরবন-সংলগ্ন ভোলা নদীর তীরে অবস্থান করছে। বনবিভাগের নিজস্ব সেচ পাম্প দিয়ে পানি ছিটানোর কাজ করছে আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সুন্দরবনের যে এলাকায় আগুন লেগেছে সেখান থেকে মরা ভোলা নদীর দূরত্ব অন্তত তিন কিলোমিটার। এতো দূরত্বে পানি নিয়ে তা দিয়ে আগুন নেভাতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, শনিবার দুপুর একটা নাগাদ বনকর্মীরা চাঁদপাই রেঞ্জের কলমতেজি টহল ফাঁড়ি এলাকায় আগুনের ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখার পর বনকর্মীরা সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। ওই এলাকার আগুন এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। আমাদের নিজস্ব সেচ পাম্প দিয়ে আগুন নেভাচ্ছি। রোববার ভোর রাত পর্যন্ত আমরা আগুন নেভানোর কাজ করি। যেখানেই ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখতে পাচ্ছি, সেখানে পানি ছিটানো হচ্ছে।

গত বছর ৪ মে চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া এলাকায় আগুন লাগে। তাতে বনের পাঁচ একর এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ২৩ বছরে সুন্দরবনে অন্তত ২৬ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। যার প্রায় সবগুলোই ভোলা নদী পার্শ্ববর্তী বনের উচু এলাকায়।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]