স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে সশস্ত্র বাহিনীতে শত শত সেনা অফিসারকে গুম, খুন আর অবৈধ চাকরিচ্যুতের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছে জাস্টিস ফর কমরেডস। একইসঙ্গে চাকরিচ্যুত ও বঞ্চিত সামরিক কর্মকর্তাদের বঞ্চনা নিরসনে বাহিনীগুলোর অধীনে গঠিত প্রহসনমূলক বোর্ড বাতিল করে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের তারা।
রোববার (২৩ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এসব দাবি জানায়। এসময় ৫ আগস্টের পর এখনও কেন স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হলো না, সেই প্রশ্ন রাখেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে চাকরিচ্যুত সদস্যদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন- জাস্টিস ফর কমরেডসের সমন্বয়ক লে. কর্নেল (অব) শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদে পিলখানায় ৫৭ সেনা অফিসারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মতের অমিল বলেই শত শত সেনা অফিসারকে গুম, খুন আর চাকরিচ্যুত করেছে হাসিনা সরকারের প্রশাসন। এসবের বিচারে দ্রুত তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি।
শামসুল ইসলাম বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে এখনও স্বৈরাচারের দোসর কর্মকর্তারা কাজ করছেন, যার জন্য এসবের বিচার হচ্ছে না। শত শত অফিসার চাকরি হারালেও মাত্র ১৬৩ জনের কেস সমাধান করা হয়েছে। মতের অমিল বলে অনেকের যোগ্যতা থাকলেও প্রমোশন দেওয়া হইনি। অবিলম্বে স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হব, যেখানে কোনো কালো আইন থাকবে না।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমরা সশস্ত্র বাহিনীর কিছু সদস্য ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে বিভিন্নভাবে ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়ে এখন খুবই করুণ পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করছি। আমাদের অনেকেই অন্যায়ভাবে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছি চাকরিচ্যুত হয়েছি এবং পদোন্নতি ও সুবিধা বঞ্চিত হয়েছি। যা সামরিক পরিমণ্ডলের ভেতরে এবং বাহিরে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করেছে। এমনকি এসব ঘটনা আমাদের জীবনকে কষ্টদায়ক ও দুর্বিষহ করে তুলেছে।
কয়েকজন সেনাকর্মকর্তার বর্ণনা দিয়ে সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনীতে একজন চৌকস অফিসার ছিলেন ব্রিগেডিয়ার আযমি। এমনকি সেনা প্রধান হওয়ার সমস্ত যোগ্যতাই তার ছিল। শুধুমাত্র তার বাবার ভিন্নমতের রাজনীতির কারণেই কোনো কারণ ছাড়াই তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং পরবর্তীতে গুম করা হয়। ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না হলে হয়ত তিনি আর এই পৃথিবীর আলো দেখতেন না। এমনকি সেনাবাহিনীতে গর্ব করার মতো আরেক অফিসার ছিলেন লে. কর্নেল হাসিন, যিনি দুবার বীর প্রতীকের সম্মান পেয়েছেন। শুধুমাত্র ফ্যাসিস্ট সরকারের আনুগত্য না করার কারণেই চাকরিরত অবস্থায় তাকে গুম করা হয়, অন্যায় আর প্রহসনের বিচারে শাস্তি দিয়ে তাকে জেলে প্রেরণ করা হয়। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর পরবর্তীতে আবার তাকে দীর্ঘদিন গুম করে রাখা হয়।
তিনি আরও বলেন, ২০১২-১৩ সালে ক্যু'র মিথ্যা মামলা সাজিয়ে ভিন্ন মতাবলম্বী প্রায় ৪৫ জন অফিসারকে মেজর জিয়ার সহযোগী হিসেবে জেল, চাকরিচ্যুতি সহ বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়। গত ১৬ বছরে যে অফিসারই আওয়ামী আনুগত্য স্বীকার করেনি কিংবা তাদের অন্যায় আদেশে পরিচালিত হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগ এনে কোনোরূপ বিচার ছাড়াই বরখাস্ত কিংবা চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।