ইসলামে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর একটি মহিমান্বিত রাত। এ রাতের চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ কোনো রাত নেই। পবিত্র কোরআন ঘোষণা করছে- লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে; আর মহিমান্বিত রজনী সম্বন্ধে তুমি কী জান? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’ (সুরা কদর: ১-৫)
ঠিক কত তারিখে এই রাতের অবস্থান তা কেউ জানে না। তবে রমজানের শেষ দশকে এর অনুসন্ধানের নির্দেশ এসেছে হাদিসে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (স.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে কদরের রাত অনুসন্ধান করো।’ (সহিহ বুখারি: ২০২০)
লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের অর্থ হলো—আল্লাহর দরবারে এই রাতের কল্যাণ লাভের প্রার্থনা করা, নিজের ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। যেন আল্লাহ পাপের কারণে লাইলাতুল কদরের বরকত থেকে বঞ্চিত না করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘এ মাসে (রমজানে) এমন একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে সত্যিই বঞ্চিত হলো।’ (সুনানে নাসায়ি: ২১০৮)
লাইলাতুল কদরে পবিত্র হয়ে ইখলাসের সঙ্গে যত বেশি ইবাদত করা যায় ততই ভালো। যেকোনো গুনাহ ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বেঁচে থাকাও ইবাদত কবুল হওয়ার মাধ্যম। শবে কদরে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমলগুলোর মধ্যে রয়েছে এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, তাওবা-ইস্তেগফার, জিকির-আজকার, কবর জিয়ারত, তাহাজ্জুদ নামাজ, দরুদ পাঠ ইত্যাদি।
পাশাপাশি একটি দোয়া পড়তে বলেছেন নবীজি (স.)। দোয়াটি হলো- اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি’ (অর্থ) ‘হে আল্লাহ, আপনি সম্মানিত ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী বলব? তখন তিনি দোয়াটি পড়তে বলেন। (সুনানে তিরমিজি: ৩৫১৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শবে বরাতে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল আমল করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে বর্ণিত উল্লেখিত দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।