31588

05/01/2025 টিকাদানে বিশ্বে রোলমডেল বাংলাদেশ : এক ডলারে ফেরত আসে ২৫ ডলার

টিকাদানে বিশ্বে রোলমডেল বাংলাদেশ : এক ডলারে ফেরত আসে ২৫ ডলার

স্বাস্থ্য ডেস্ক

৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:০৮

একটি শিশুকে টিকা দিতে খরচ হয় মাত্র এক মার্কিন ডলার। কিন্তু এর বিনিময়ে সমাজ ফিরে পায় ২৫ ডলারের সমমূল্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুফল। এ তথ্য তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) এখন শুধু একটি স্বাস্থ্য প্রকল্প নয়, এটি বাংলাদেশের অন্যতম সফল বিনিয়োগ।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ-২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানান।

সভায় দেশের টিকাদান কার্যক্রমের সাফল্য, চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এবং ইপিআই-এর সহযোগিতায় আয়োজিত সভায় সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, “আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর যে টিকার ঘাটতি দেখা দিয়েছিল, তা সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে, ইউনিসেফ আমাদের পাশে রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা ইপিআই কর্মসূচিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারব।”

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান সভায় বলেন, “১৯৮৫ সালে ইপিআই কভারেজ ছিল ২ শতাংশের নিচে, এখন তা দাঁড়িয়েছে ৮৩.৯ শতাংশে। এটি আমাদের টেকসই স্বাস্থ্য উন্নয়নের এক বড় অর্জন।”

তিনি জানান, ইপিআই কার্যক্রম ১৯৭৯ সালে শুরু হলেও ধাপে ধাপে তা সারা দেশে বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে ভ্যাকসিন-প্রতিরোধযোগ্য রোগ নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

ইউনিসেফের হেলথ ম্যানেজার ডা. রিয়াদ মাহমুদ বলেন, “ইপিআই একটি ‘হাই রিটার্ন’ প্রোগ্রাম। শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়েই নয়, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও এর প্রভাব ব্যাপক।”

তিনি জানান, ভ্যাক্সইপিআই, ই-ট্রাকার, জিআইএসভিত্তিক মাইক্রোপ্ল্যানিং এবং ই-ভিএলএমআইএসের মতো উদ্ভাবনগুলো টিকাদান ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

সভায় টিকাদান ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নের জন্য কিছু সুপারিশও উঠে আসে। এর মধ্যে রয়েছে—শূন্যপদে দ্রুত জনবল নিয়োগ, জনসংখ্যা অনুপাতে টিকা কেন্দ্র বণ্টন, ভ্যাকসিন সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং মনিটরিং জোরদার করা।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “সাফল্যের পাশাপাশি এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে—যেমন কাভারেজে শহর-গ্রামের বৈষম্য, জনবল ঘাটতি ও সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা। এসব নিরসন করলেই ইপিআই হবে আরও কার্যকর।”

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. শেখ ছাইদুল হক, যুগ্ম সচিব ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানী, ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খানসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

সভাটি সঞ্চালনা করেন ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পলিসি অ্যাডভাইজার এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আজকের এই আলোচনা সভা যদি টিকাদান কর্মসূচির দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করে বাস্তবভিত্তিক সমাধানের দিকে এগিয়ে নিতে পারে, তবে সেটিই হবে এই আয়োজনের বড় সার্থকতা।”

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]