অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মনে করেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে মৌলিক নিয়মকানুন যথাযথভাবে মানলে এবং জেলা পর্যায়ের সিভিল সার্জনরা আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে—সীমিত সম্পদের মধ্যেও চিকিৎসাসেবার মান অন্তত ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
সোমবার (১২ মে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রথম সিভিল সার্জন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধু জনবল বা যন্ত্রপাতির ঘাটতির অজুহাত দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। স্বাস্থ্যসেবায় যেটুকু আছে, সেটুকু দিয়েই সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে হবে। পাশাপাশি বাস্তব সমস্যাগুলো খুঁজে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।’
তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নতির জন্য প্রয়োজন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বশীলতা ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা। সিভিল সার্জনরা যদি মন থেকে চায়, তাহলে বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যেই উন্নয়নের সূচনা সম্ভব।
ড. ইউনূস জানান, ডিসি সম্মেলনের মতো এতদিন সিভিল সার্জনদের নিয়ে কোনো সম্মেলন না হওয়াটা আশ্চর্যজনক। তিনি আশা করেন, এই সম্মেলন মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি করবে। এতে তাদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যা তুলে ধরার সুযোগ থাকবে। পাশাপাশি নীতিনির্ধারকরা বাস্তব চিত্র সম্পর্কে আরও ভালোভাবে অবগত হবেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করা ও সমাধানের পথ খোঁজা অনেক সহজ হবে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার ও মঙ্গলবার—দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ৬৪ জেলার সিভিল সার্জনরা অংশ নিচ্ছেন। এর আগে প্রতিটি জেলা থেকে তাদের নিজ নিজ এলাকার স্বাস্থ্যসেবার চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই এই সম্মেলনের কার্যক্রম সাজানো হয়েছে।
সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব এবং সংশ্লিষ্ট দফতরের সিনিয়র কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন। তারা মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা শুনে বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা দেবেন।
এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতা ও মানুষের অসন্তোষের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে, করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্য রয়েছে। মন্ত্রণালয় মনে করছে, মাঠের অভিজ্ঞতার আলোকে উচ্চপর্যায়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারলে, জেলার স্বাস্থ্যসেবার কাঠামো আরও দৃঢ় ও কার্যকর হবে।
অধ্যাপক ইউনূসের মতে, শুধুমাত্র প্রযুক্তি বা অর্থ নয়—দায়িত্ববোধ, পরিকল্পনা ও মনোযোগ দিয়েই দেশের চিকিৎসাসেবাকে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।