32260

05/25/2025 নিরাপত্তাহীনতায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ব্যাবসায়ী

নিরাপত্তাহীনতায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ব্যাবসায়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ মে ২০২৫ ১৯:৩৮

নিজের জীবন ও পরিবারের নিরাপত্তাহীনতায় সন্ত্রাসী হোসেন মিজান, পাবেল গাংদের অব্যাহত হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজধানীর ইংলিশ রোডের লৌহ ব্যাবসায়ী এম এম এ কাদের। পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ার ওই সন্ত্রাসীরা তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদেরকে ১৪টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। কিন্তু ব্যাবসায়ীর দেয়া মামলায় ওই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আদালত গ্ৰেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও রাজধানীর ভাসানটেক থানা পুলিশ সন্ত্রাসীদের আটক করছেনা। তাছাড়া হোসেন মিজান সিদ্ধিরগঞ্জ থানার দায়ের হওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হত্যা মামলার আসামি হলেও তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই ব্যাবসায়ী।

শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের হল রুমে সংবাদ সম্মেলনে ওই অভিযোগ করেন তিনি।

লিখিত বক্তৃতায় এম এম এ কাদের বলেন, আমার সাবেক কর্মচারী হোসেন মিজান আমার পরিবারের সদস্যসহ আমাকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। হোসেন মিজান বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এবং জুলাই আন্দোলন ঠেকাতে সশস্ত্র হামলার অন্যতম অর্থ জোগান দাতা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। হোসেন মিজানের হুমকিতে বর্তমানে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের জীবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি বলেন, হোসেন মিজান আমার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে আমার বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে। দীর্ঘ সময় চাকরি করার পর ২০০৫ সালে হোসেন মিজান ঠিকাদারী করার  জন্য স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র করে ব্যবসায়ীক লভ্যাংশ দেয়ার শর্তে আমার কাছ থেকে কয়েক ধাপে ২০০৫ - ২০১৭ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মোটা অংকের টাকা নেয় এবং হিসাব করে আমাকে বিভিন্ন তারিখের তার স্বাক্ষর করা চেক দেয়। চেকগুলো ডিজঅনার হলে আমি প্রথমে উকিল নোটিশ এবং পরে মামলা দায়ের করি। এর পর হোসেন মিজান একের পর এক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয়া শুরু করে। ২০২১ সালে আমার পাওনা টাকা পরিশোধের বৈঠক করার জন্য হোসেন মিজান আমাকে ভোলায় ডেকে পাঠায়। ওইসময় ভোলা ৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী শাওনের ক্যাডার লালমোহনের স্থানীয় ঈমাম কমিশনারের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বৈঠকে আসা বৃদ্ধ নারী পুরুষদেরকে মারধর করে ও মহিলাদের গায়ে হাত দেয়। তখন নারি নির্যাতন মামলা সহ কোর্টে ৬টি মামলা হয়। ততকালীন সরকারের ক্ষমতা ও টাকার বলে সবগুলো মামলা খারিজ করে দেয়। ওই ঘটনায় আহত সিদ্দিক মোল্লা অসুস্থ থাকার কিছুদিন পর মারা যায়।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে হোসেন মিজানের নামে অর্থ আদায় মামলা, প্রতারণা, সাইবার ক্রাইম, চেক ডিজঅনার মামলা সহ ৮টি মামলা চলমান রয়েছে।
আমার দায়ের করা এন আই এক্টের মামলায় হোসেন মিজানকে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছরের কারাদণ্ড ও চেকের সমপরিমাণ টাকা প্রদানের আদেশ দিয়েছে ঢাকার বিশেষ যুগ্ম দায়রা জজ আদালত। ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে গ্ৰেফতারি পরোয়ানা ইস্যূ করা হয়। তাকে গ্ৰেফতার করার জন্য আমি ৬ বার ভাষানটেক থানার ওসির সাথে দেখা করলেও থানা পুলিশ এখনো তাকে গ্রেফতার করতে পারে নাই। তাকে গ্ৰেফতারের জন্য পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেও কোন লাভ হয়নি।‌ হোসেন মিজান পাওনা টাকা আত্মসাৎ করতে ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত কৌশলে আমাকে তারেক জিয়ার ক্যাশিয়ার বলে আমার বিরুদ্ধে অপ-প্রচার করে। ওই সময়
আওয়ামীলীগ সরকারের আমলের প্রভাবশালী এমপি ভোলা-৩ আসনের সাবেক এমপি নূরুন্নবি চৌধুরী শাওন এবং ভোলা-৪ আসনের সাবেক উপমন্ত্রী জ্যাকবের সঙ্গে গভীর সখ্যতার কারনে প্রভাব খাটিয়ে আমার টাকা ফেরত না দিয়ে আমাকে মামলা, হামলা ও প্রান নাশের হুমকি দিয়ে আসছিলো। এরই মধ্যে প্রচুর অবৈধ সম্পদ অর্জন করে হোসেন মিজান।
তাছাড়া বিগত পতিত সরকারের সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ, জিসানকে দিয়ে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে এবং প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। কিছুদিন পর পুনরায় লক্ষ্মীপুরের এমপি নয়নের ছোট ভাই বাপ্পি, ঢাকা দক্ষিণের ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী, কোতায়ালী খানার ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন, পল্টন থানার ছাত্রলীগের সভাপতি আল-আমিন, সন্ত্রাসী সুকান্ত সুমন কাশারীকে দিয়ে চাঁদা দাবি করানো হয়। চাঁদা না দেওয়া হলে প্রাণ নাশের হুমকি দেয় তারা। তখন আমার দুই ছেলে হোসেন মিজান এর সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে স্বপরিবারে আমেরিকা চলে যান। ভোলার বোরহান উদ্দিন উপজেলার হাকিমুদ্দিন ইউনিয়নে হোসেন মিজানের এক পালিত সন্ত্রাসী পাভেল হাওলাদারকে দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের সবাইকে শেষ করে দিতে বলে। বিনিময়ে পাভেল পাবে হাকিমুদ্দিনে একটি দোতলা বাড়ী, ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে একটি ফ্ল্যাট। বিএনপি নেতা পরিচয় দেয়া সন্ত্রাসী পাভেলের গ্রামের বাড়ি হাকিমুদ্দিন ইউনিয়নে হলেও সে ঢাকায় বসবাস করে। বিভিন্ন সময় আমি কোর্টে সাক্ষী দিতে গেলে এই পাভেল দলবল নিয়ে কোর্টে গিয়ে আমাকে এবং মামলার অন্যান্য সাক্ষীদেরকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে বাঁধা দেয় এবং আমাদেরকে হত্যা করার হুমকি দেয়। পাভেল আগে নিজেকে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে আমাকে ভয় ভীতি দেখাতো। ২০২৪ এর ৫ আগস্টের পর ক্যাডার পাবেল বর্তমানে নিজেকে বিএনপি নেতা বলে পরিচয় দেয়। হোসেন মিজান একের পর এক ষড়যন্ত্র করে উপায়ান্ত না পেয়ে আমাকে আওয়ামী লীগ নেতা এবং আমার ছোট ছেলে মোস্তফা নবি ফাইয়াজকে ছাত্রলীগের নেতা সাজিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সাথে ১৪টি মিথ্যা হত্যা মামলায় আসামী করেছে। এর মধ্যে ৯টি মামলা থানা পুলিশ কোর্টে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে ওই মামলা সাজানো মিথ্যা। আর বাকি ৫টি মামলারই বাদী পাওয়া যাচ্ছে না। আমার ছোট ছেলে মোস্তফা নবী ফাইয়াজ লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সস্ত্রীক উচ্চ শিক্ষা গ্ৰহন করে। তাদের একমাত্র পুত্র সন্তান আমেরিকায় জন্মগ্রহন করে সে জন্মসূত্রে আমেরিকান নাগরিক। ফাইয়াজ জীবনের বেশীরভাগ সময় বিদেশে কাটিয়েছে। সে কিভাবে ছাত্রলীগের নেতা হয়? তাকেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হত্যার দায়ে ১৪ টি মিথ্যা মামলার আসামী করা হয়।
আমি এবং আমার ছেলেরা কেউই জীবনে কোনও দিন কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নই।

তিনি বলেন, হোসেন মিজানকে আশ্রয় দিয়ে আজ আমি নিজেই নিঃস্ব হয়ে বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। আমার সন্তানেরা দেশ ছাড়া। অবিলম্বে ওই সন্ত্রাসীদের গ্ৰেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
###

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]