32433

05/31/2025 ‘একটা ঘর দেন, একটু শান্তিতে বাঁচি’

‘একটা ঘর দেন, একটু শান্তিতে বাঁচি’

জেলা সংবাদদাতা, পিরোজপুর

২৯ মে ২০২৫ ১৬:৫৪

পিরোজপুর জেলার টগরা গ্রাম। সন্ধ্যা নদীর তীরঘেঁষা এই জনপদে বাঁধের পাশেই খড়-কাঠ ও টিনের ঠুনকো ঘরে দিন কাটাচ্ছেন সেফালি বেগম (৮০)। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর, জীর্ণ কাঁপা কণ্ঠে অনুরোধ—‘একটা ঘর দেন, একটু শান্তিতে বাঁচি।’

সন্ধ্যার ঢেউয়ের গা ঘেঁষে টগরা গ্রামের এ প্রান্তে বসবাস করেন দু’টি পরিবারের মানুষ। বৃষ্টির দিনে টিনের চাল ফুঁড়ে ঘরে পড়ে পানি। নেই ঘরের বেড়া, জানালা-দরজা। ঝড়ের রাতে আশ্রয় নিতে হয় সাইক্লোন সেন্টারে, অন্যের ঘরে।

একটি ঘরের ভেতর দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে সেফালি বলেন, ‘সবাই ঘর পায়, সরকার কত ঘর দিলেন—কিন্তু আমার কপালে জোটে না কিছুই।’

তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একমাত্র মেয়ে ফজিলা বেগম (৪০)—স্বামী পরিত্যক্তা। তিনিও একই সুরে বলেন, ‘আমার মায়ের বয়স ৮০। কিন্তু কোনো দিন পাননি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, এমনকি একটা কম্বলও না।’

এই গ্রামে এমন অসহায় মানুষের সংখ্যা একজন বা দুজন নয়। পাশের ঘরে বাস করেন মহারাজ হাওলাদার (৪০)। তার মা হাজেরা বেগম (৭৫) জানান, ‘আমাদের একটা ঘরের জন্য ৭০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই আমরা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছি।’

হাজেরা বেগমের চোখে বিস্ময়, অপার বিস্ময়—‘বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা বা প্রতিবন্ধী ভাতা নামে কিছু আছে শুনেছি, কিন্তু আমরা কখনো পাইনি।’

ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে মাত্র ৮-১০ হাত জায়গার ছোট্ট ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করেন তারা। মহারাজের স্ত্রী আমেনা বেগম (৪০) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবার বাড়ি থেকে কষ্ট দেখে বিয়ে হয় এখানে। কিন্তু কষ্টই আমার কপালে। সিডরের পর ঘরটা আর ঠিক করতে পারিনি। মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে গেছি, সবাই টাকা চায়।’

ঘর-বাড়িহীন মানুষের সংখ্যা শুধু সেফালি বা মহারাজের পরিবারেই সীমাবদ্ধ নয়। বেড়িবাঁধ ধরে ফেরার পথে নদীর দিক থেকে চিৎকার করে ডেকে ওঠেন একজন,
— ‘ও স্যার, আমি মো. আলী আকবর। আমারও ঘর নাই, একটা ঘর দিয়েন।’

তাদের প্রশ্ন—এই ঘরবিহীন মানুষদের জন্য সরকারের এতসব প্রকল্প থাকলেও তারা কেন বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন?

এ বিষয়ে পারেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]