জাতীয় দলের স্পেনিশ হেড কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরাকে নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে তুমুল সমালোচনা চলছে। সাবেক ফুটবলার, সংগঠক, সমর্থক এমনকি বাফুফের এক নির্বাহী সদস্য ক্যাবরেরার বিদায় চেয়েছেন। আগামী বছর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ক্যাবরেরার চুক্তি থাকলেও উদ্ভৃত পরিস্থিতিতে ক্যাবরেরাকে নিয়ে বেশ সংকটে বাফুফে। তেমনি ক্যাবরেরার অধীনে বাংলাদেশ দলের এশিয়া কাপ খেলাও শঙ্কার মধ্যে।
১৯৮০ সালে বাংলাদেশ এশিয়া কাপ ফুটবল খেলেছিল। ৪৫ বছর পর আবার সেই এশিয়া কাপের স্বপ্ন রঙিন হয়েছে হামজা-সামিতের মতো ফুটবলার দলে আসায়। সেই আশা অনেকটাই গুঁড়েবালি হয়ে যাবে অক্টোবরে হংকংয়ের বিপক্ষে হোম-অ্যাওয়ে দুই ম্যাচের ফলাফল ইতিবাচক না হলে।
অক্টোবর ম্যাচ দুটোকে তাই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এখনই একটি সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন বলে মন্তব্য জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হোসেন এমিলির, ‘হংকং এবং সিঙ্গাপুরের ইতোমধ্যে ৪ পয়েন্ট হয়েছে। বাংলাদেশ হংকংয়ের বিপক্ষে হোম ম্যাচে জিততেই হবে। না হলে এশিয়া কাপ খেলা অনেকটাই দুরহ হয়ে যাবে। পাশাপাশি হংকংয়ে গিয়েও অন্তত ড্র রাখতে হবে। ঐ দুই ম্যাচ নিয়ে এখনই ফেডারেশনকে সিদ্ধান্তে আসা উচিত তারা হ্যাভিয়েরের অধীনেই দলকে রাখবে না নতুন কোচ দেবে।’
২০২২ সালের শুরু থেকে হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা বাংলাদেশ দলের দায়িত্বে। ঘরোয়া লিগে ভালো পারফর্ম করা ফুটবলারদের তিনি দলে ডাকেন না। লিগে না খেলা ফুটবলারদের একাদশে রাখেন। দল নির্বাচনের পাশাপাশি ম্যাচ কৌশলেও রয়েছে অনেক দুর্বলতা। মাঠে ফুটবলাররা খেললেও কোচরা মাঠের বাইরে থেকে খেলা পরিচালনা করেন। ক্ষণে ক্ষণে খেলার পরিস্থিতির সঙ্গে কৌশল-পরিকল্পনা বদলান কোচরা। বাংলাদেশের কোচ হ্যাভিয়েরের এই ক্ষেত্রে দুর্বলতা স্পষ্ট।
এই নিয়ে এমিলির মন্তব্য, 'ম্যাচ রিডিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি ম্যাচেই তার রিডিং দুর্বলতা ধরা পড়েছে। হামজা-সামিত আসার পর আমাদের দলীয় শক্তি অনেক বেড়েছে। দুই ম্যাচে আমরা সেটার পূর্ণ প্রতিফলন পাইনি। '
চুক্তির মেয়াদের আগে কোচ বিদায়ে বাফুফের কোটি টাকা জরিমানা দেয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সাবেক বৃটিশ কোচ জেমি ডে, ডাচ কোচ রেনে কোস্টার সহ একাধিক কোচের বিদায়ে শুধু জরিমানা নয় ফিফা পর্যন্ত ঘটনা গড়িয়েছিল। তবে হ্যাভিয়ের ক্যাবেররার সঙ্গে সর্বশেষ চুক্তিতে দুই পক্ষের যে কেউ ১-২ দুই মাসের নোটিশে বা আর্থিক ক্ষতিপূরণে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে বলে জানা গেছে বিভিন্ন মাধ্যমে। সেই হিসেবে হ্যাভিয়েরকে এই মুহুর্তে বিদায় করলে ১-২ মাসের বেতন বাড়তি প্রদান করতে হবে।
বাফুফে নির্বাহী কমিটি ২১ জনের। এই কমিটির অনেকেই কোচ হ্যাভিয়েরকে রাখার পক্ষে নন। এরপরও বাফুফের নীতি নির্ধারকদের একাংশ কোচ রদবদলে ঝুকি নিয়ে খানিকটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে। পাশাপাশি বাফুফের বাজেট, বাংলাদেশের ফুটবলের সঙ্গে মানানসই কোচও পাওয়া একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি বর্তমান সময়েই কোচ বদলের সেরা সময় মনে করছেন, 'বাফুফে যদি আসলেই কোচের পরিবর্তন করতে চায় তাহলে এখনই সেরা সময়। এক-দেড় মাসের মধ্যে ভালো মানের নতুন কোচ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। সেই কোচ আগস্টে বসুন্ধরা কিংস ও ঢাকা আবাহনীর দু'টো ম্যাচ দেখতে পারবে। পাশাপাশি সেপ্টেম্বর উইন্ডোতেও দু'টি প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। অক্টোবরে হংকং ম্যাচে ফলাফল ভালো না হলে পরে বদলিয়েও আর লাভ হবে না। অক্টোবরে দুই ম্যাচের সপ্তাহ তিনেক পরেই ভারত ম্যাচ। খুব স্বল্প সময় তখন কোচ পাওয়া এবং কোচের জন্য সময় কম থাকবে। সব কিছু মিলিয়ে এখনই কোচ বদলের প্রকৃত সময়।'
জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ও দেশের অন্যতম শীর্ষ কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু। তিনি নতুন কোচের সন্ধান এবং নতুন কোচের জন্য ন্যূনতম সময় সম্পর্কে বলেন, ’অনেক ফেডারেশনের ট্যাকনিক্যাল বিভাগ কোচের ব্যাক আপ পরিকল্পনাও রাখে। বাংলাদেশেরে সেটা নেই। ফলে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সিভি আহ্বান করেই কোচ অনুসন্ধান হয়। এই প্রক্রিয়াতেও এক-দেড় মাসে ভালো মানের কোচ খুজে বের করার জন্য যথেষ্ট।'
এ সকল ক্ষেত্রে মিন্টুর পরামর্শ, 'বিগত সময় দেখা গেছে বাংলাদেশ জাতীয় দল কিংবা ক্লাব দলে কাজ করেছে এমন কাউকেই আবার ফিরিয়ে আনা হয় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে। আমার মতে নতুন কেউ আসলে সে একেবারে সম্পূর্ণ তার ধ্যান-ধারণা দিয়ে কাজ করতে পারবে। ভালো মানের কোচ এক মাসের মধ্যে দল সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা ও খেলার স্টাইল সম্পর্কে ধারণা পেতে যথেষ্ট। '
১০ জুন সিঙ্গাপুর ম্যাচের পর দিনই ঢাকা ছেড়েছেন হ্যাভিয়ের। বাফুফের জাতীয় দল কমিটি এখনো কোনো সভা করেনি সেই ম্যাচের পর। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল জাতীয় দল কমিটির প্রধান। তিনি ও সাধারণ সম্পাদক এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন ফিফা সংক্রান্ত কাজে। সভাপতি দেশে ফিরে নাকি অনলাইনে জাতীয় দল কমিটির সভা করবেন সেটা এখনো নিশ্চিত হয়নি। ফুটবলাঙ্গনের সবাই জাতীয় দল কমিটির সভার দিকে তাকিয়ে।
জাতীয় দল কমিটির সভায় কোচ নিয়ে আদৌ কোনো সিদ্ধান্ত আসবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকেরই। ২০২৪ সালে ডিসেম্বরে হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার চুক্তি শেষ হয়েছিল। বাফুফে সভাপতি তখন বলেছিলেন, 'জাতীয় দল কমিটির প্রথম সভায় কোচের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে'। বাস্তবে অবশ্য সেটা দেখা যায়নি। অনলাইনে জরুরি কমিটির সভার শেষ অংশে সভাপতি নারী ও পুরুষ দুই দলের কোচের চুক্তি নবায়নের ইচ্ছে প্রকাশ করেন তখন সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চার সহ-সভাপতি এতে সম্মতি প্রদান করেন।