বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি উপযুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
শনিবার বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘যুদ্ধের ময়দান থেকে রাষ্ট্রের প্রধান জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক স্মারক প্রকাশনা ও আর্কাইভ উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচন ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারে বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রশ্নে অনেক রাজনৈতিক দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবিও তুলছে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এ পদ্ধতির বিরোধিতা করে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষেই অবস্থান করছে।
পিআর হচ্ছে নির্বাচনি ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কোনো দল মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১০ শতাংশ পায়, তাহলে সেই দল আনুপাতিক হারে সংসদের ১০ শতাংশ বা ৩০টি আসন পাবেন। পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুক্ত, গোপন ও মিশ্র তিনটি আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, কেউ রাজনৈতিক দাবি হিসেবে উত্থাপন করতে পারে, সেটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। তবে সেটা সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কোনো মানে নাই। কোনো দল তাদের অবস্থান থেকে চাইতেই পারে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় এবং ইতিপূর্বে আমাদের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, সেই পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মধ্যে আমরা কোনো ঐকমত্য পাইনি। তা ছাড়া বাংলাদেশে আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ইতিহাস নাই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এটা একটা নতুন ধারণা। যার জন্য অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পৃথিবীর বহু দেশে হয়েছে। আমরা দেখেছি, এই দেশের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছি, এ দেশের সব গণতন্ত্রকামী মানুষ সংগ্রাম করেছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য নয়। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের জন্যই আমরা ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি। ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য আমাদের অসংখ্য জীবন হারাতে হয়েছে।’
এই বিএনপি নেতা বলেন, বাংলাদেশে আমরা এখন সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সংস্কার এখন এমন অবস্থা হয়েছে আমি সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে বলছিলাম- একটা কবিতাই লিখে ফেলেন, ‘হে সংস্কার তোমাকে পাওয়ার জন্য, আর কতকাল আলাপ আলোচনা করিবে, খানা-পিনা খাইবে সংস্কার করার জন্য’।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের নিয়ত কী? সবাইকে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের প্রস্তাব মেনে নিতে হবে এই যদি নিয়ত হয় তাহলে কী ঐক্যমত্য হবে? আমরা আলোচনা করছি, কাছাকাছি আসছি জাতির জন্য যেটা মঙ্গল হবে সেটা আমরা ধারণ করব। এভাবেই আমরা এ সংস্কারের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাব এবং এ সংস্কার তো আজকেই শেষ হবে না। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।
‘সংস্কার: কোনো বাইবেল নয়’
সালাহউদ্দিন বলেন, এ সংস্কার এমনভাবে তারা করতে চাচ্ছেন- সংবিধানে আমরা এমন সংস্কার ঢুকাব, কেউ যেন আর এ সংস্কার বিলুপ্ত না করতে পারে। কিন্তু সেটা তো বাইবেল নয়, ধর্মগ্রন্থ নয়। আমরা এমন সংস্কার করব, যে সংস্কার ১০-২০ বছর পর আপনাদের হাত ধরে, নতুন প্রজন্মের হাত ধরে নতুন চাহিদার ভিত্তিতে আবার সেটা পরিবর্তন হতে হবে…সেটাই হচ্ছে সংস্কার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য দাবি করেন, এ সংস্কারের মূল প্রবক্তা তো বিএনপি। আমরা এ অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দেড় বছর আগে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের ৩১ দফা বাংলাদেশের মানুষের কাছে, রাজনৈতিক মহলে একটা রাজনৈতিক মহাকাব্যে পরিণত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জিয়াউর রহমানের ওপরে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের ওপর সংকলিত স্মারক গ্রন্থ এবং জিয়াকে নিয়ে তৈরি ইন্টারনেট আর্কাইভ ও স্মারক গ্রন্থ উদ্বোধন করেন সালাহউদ্দিন।