33793

07/02/2025 প্রতিবছর ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ৯ কোটি নতুন ওয়েবসাইট

প্রতিবছর ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ৯ কোটি নতুন ওয়েবসাইট

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক

১ জুলাই ২০২৫ ১৪:১৪

বর্তমান বিশ্বের তথ্যভাণ্ডার বলতে প্রথমেই আসে ইন্টারনেট ও ওয়েবসাইটের কথা। বিশ্বজুড়ে এখন ওয়েবসাইটের সংখ্যা প্রায় ১১২ কোটি। কিন্তু বিস্ময়করভাবে এর মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ বা সক্রিয়ভাবে ব্যবহার হচ্ছে। অর্থাৎ ৮৩ শতাংশ ওয়েবসাইট নীরব, নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ পরিসংখ্যান আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরে-ওয়েবসাইটের সংখ্যা বাড়লেও মানসম্মত কনটেন্ট ও নিয়মিত ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। অনলাইন ডেটা অ্যানালিটিকস প্ল্যাটফর্ম ডিমান্ডসেইজ-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্যগুলো। প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতি বছর ইন্টারনেটে যোগ হচ্ছে প্রায় ৯ কোটি নতুন ওয়েবসাইট। তবে প্রতিদিনই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে হাজারও সাইট। ওয়েবসাইটের সক্রিয়তা নির্ভর করে এর ট্রাফিক সোর্স বা দর্শক কতজন ভিজিট করছেন, তার ওপর। এ ট্রাফিক আসছে মূলত গুগল সার্চ, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিজ্ঞাপন থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎস গুগল।

বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বড় অংশ মোবাইল ডিভাইস থেকে ওয়েব ব্রাউজ করেন। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, এখনো ২০ শতাংশ ওয়েবসাইট মোবাইল-ফ্রেন্ডলি নয়। ফলে সেসব সাইটে ঢুকেও ব্যবহারকারীরা দ্রুত বের হয়ে যান। স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল-ফ্রেন্ডলি ওয়েব ডিজাইনের গুরুত্বও আকাশচুম্বী হচ্ছে।

ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালে, যখন টিম বার্নার্স-লি বিশ্ববাসীর জন্য ওয়ার্ল্ডওয়াইড ওয়েব নামের প্রযুক্তি তৈরি করেন। প্রথম ওয়েবসাইটটি ছিল info.cern.ch, যেখানে ওয়েব প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া ছিল। তখন ওয়েবের উদ্দেশ্য ছিল গবেষকদের জন্য তথ্য বিনিময় সহজ করা। ১৯৯৩ সালে প্রযুক্তিটি সবার জন্য উন্মুক্ত হলে ওয়েব দ্রুত হয়ে ওঠে বিশ্বমানবতার তথ্যভান্ডার।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওয়েবসাইট ও ওয়েবের সম্পর্ক অনেকটা বই ও গ্রন্থাগারের মতো। ওয়েব হলো সেই অবকাঠামো, যেখানে কোটি কোটি ওয়েবসাইট গড়ে উঠেছে—ঠিক যেমন গ্রন্থাগারে থাকে হাজারও বই।

সামগ্রিকভাবে, ওয়েবসাইটের দুনিয়া যেমন বিশাল, তেমনি এর সততা, সক্রিয়তা ও মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাও এখন তীব্র। ওয়েবের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সেসব ডিজিটাল নির্মাতাদের ওপর, যারা কনটেন্টকে জীবন্ত রাখে, নিয়মিত আপডেট করে এবং ব্যবহারকারীকে ভাবায়, জানায় ও জাগায়।

ওয়েবসাইট তৈরি যতটা সহজ হয়ে উঠেছে, সেটিকে নিয়মিত হালনাগাদ রাখা কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ করা ততটাই চ্যালেঞ্জিং। নিষ্ক্রিয় ওয়েবসাইটের পেছনের কারণগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনটি প্রধান কারণে অধিকাংশ ওয়েবসাইট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে-১. ব্যবসায়িক বা প্রকল্প ব্যর্থতা, ২. সাইবার নিরাপত্তা ও হ্যাকিং ইস্যু, ৩. পর্যাপ্ত কনটেন্ট না থাকা বা রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি।

এছাড়াও গুগলের আধিপত্য তো রয়েছেই। বিশ্বের সর্বাধিক ভিজিট হওয়া ওয়েবসাইট হলো google.com, যার প্রতিদিনের ভিজিট সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার কোটি বার।

তারপর রয়েছে YouTube ও Facebook। এ তিনটি সাইট মিলে ইন্টারনেট ট্রাফিকের একটি বড় অংশ দখল করে রেখেছে। এটি বোঝায়, নতুন ওয়েবসাইটগুলোকে টিকে থাকতে হলে কেবল তৈরি করলেই হবে না, বরং সার্চ অপ্টিমাইজেশন, সোশ্যাল শেয়ারিং এবং ইউজার ফোকাসড কনটেন্টে জোর দিতে হবে। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ওয়েব৩ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ওয়েবের ভবিষ্যৎ গঠন করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজন তথ্যনির্ভর, আপডেটেড ও ইউজারকেন্দ্রিক ওয়েবসাইট।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতের ওয়েব হবে আরও ব্যক্তিকেন্দ্রিক, সিকিউর এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ। তবে সবকিছুর মূলে থাকবে-নিয়মিত সক্রিয়তা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও ইউজার-এক্সপেরিয়েন্স।

ওয়েবসাইট শুধু সংখ্যা নয়, বরং তথ্যের ধারক ও প্রযুক্তির চালক। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সংখ্যার পেছনে গুণগত দিকটি দিন দিন অবহেলিত হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে চাইলে আমাদের এখনই ভাবতে হবে-কীভাবে সক্রিয়, সুরক্ষিত এবং অর্থবহ ওয়েবসাইট গড়ে তোলা যায়।

ডিএম /সীমা

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]