দেশে বৈদেশিক মুদ্রার ঊর্ধ্বগতির ফলে তা ৩২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করছে। তবে এই ইতিবাচক প্রবাহের মধ্যেই এসেছে বড় বিল পরিশোধের চাপ। আগামী সপ্তাহেই বাংলাদেশকে ২.০২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আকুর পুরনো বিল। ফলে নিট রিজার্ভ আবারও ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে যেতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আকু হলো— একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দফতর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। তবে এখন আকুর সদস্য পদ নেই শ্রীলঙ্কার। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি ব্যয় পরিশোধের বিভিন্ন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির আকু সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আগামী ৮ জুলাইয়ের মধ্যে আকুর বিল পরিশোধ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এটার পরিমাণ কত তা এখনো নিশ্চিত নয়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এবার আকুর বিল পরিশোধ করা হবে ২.০২ বিলিয়ন ডলার। গত ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১.৬৮ বিলিয়ন ডলার। আগামী সপ্তাহে আকুর বিল পরিশোধ হওয়ার পর গ্রস রিজার্ভ কমে ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নামতে পারে। তবে বিল পরিশোধ হলেও দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভে কোনো পরিবর্তন আসবে না। বর্তমানে দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ বা এনআইআরের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী এক বছরের মধ্যে কী পরিমাণ বিল পরিশোধ করবে তা রিজার্ভ থেকে বাদ দেওয়ার পরই নিট রিজার্ভ হিসাব করা হয়। এ জন্য আকুসহ অন্যান্য বিল পরিশোধে নিট রিজার্ভে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসে না। তবে রিজার্ভ থেকে যদি ডলার বিক্রি হয়, বা সরকার তার কোনো প্রজেক্টে ডলারে বিনিয়োগ বা ঋণ দেয় তাহলেই নিট রিজার্ভে প্রভাব পড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ প্রতি দুই মাস অন্তর আকুর বিল পরিশোধ করে থাকে। সর্বশেষ ৬ মে, মার্চ ও এপ্রিল মাসের আমদানির জন্য ১.৮৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল, যার ফলে বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ নেমে গিয়েছিল ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণের অর্থ ডলারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় রিজার্ভ প্রায় চার বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।
এ জন্য আকুর বিল পরিশোধের পরও বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ থাকবে ২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যা গত ৩০ জুন পর্যন্ত এই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৬.৬৬ বিলিয়ন ডলার।
ডিএম/সীমা