হত্যাকাণ্ড এবং এ জাতীয় অপরাধ দমনে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান হলো কিসাস। ‘কিসাস’ শব্দের শাব্দিক অর্থ সমপরিমাণ বা অনুরূপ। অর্থাৎ অন্যের প্রতি যতটুকু জুলুম করা হয়েছে, তার সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করা তার পক্ষে জায়েজ। এর চাইতে বেশি কিছু করা জায়েজ নয়।
কিসাস এ নামকরণ এজন্য হয়েছে যে, নিহতের অভিভাবক প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষেত্রে হত্যাকারীর ন্যায় আচরণ করে থাকে, অর্থাৎ তার কাজের অনুসরণ করে। তাই এ প্রতিশোধকে কিসাস বলা হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তিকে যদি ইচ্ছাকৃত অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয় এবং হত্যাকারীর অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে নিহতের উত্তরাধিকারী ব্যক্তির এ অধিকার থাকে যে সে হত্যাকারী থেকে কিসাস গ্রহণের দাবি তুলবে।
পবিত্র কোরআনের দুই সূরায় তিনটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এ বিধান নিয়ে আলোচনা করেছেন। বর্ণিত হয়েছে— কেউ যদি হত্যা অথবা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টির অপরাধ ছাড়া কাউকে হত্যা করে, তবে সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করল। (সূরা মায়েদা, আয়াত : ৩২)
এক হাদিসে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মুসলিম বান্দা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল তার রক্তপণ তিনটি কারণ ছাড়া হালাল নয়—
(১) প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, (২) বিবাহিত ব্যভিচারীকে (রজম করা), (৩) দীন ইসলাম পরিত্যাগকারী- মুসলিম জামাত থেকে সম্পর্কচ্ছেদকারীকে হত্যা করা। (বুখারি ও মুসলিম)
পবিত্র কোরআনের দুই সূরায় তিনটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এ বিধান নিয়ে আলোচনা করেছেন। বর্ণিত হয়েছে—
হে মুমিনগণ! যাদেরকে (ইচ্ছাকৃত অন্যায়ভাবে) হত্যা করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কিসাস (-এর বিধান) ফরজ করা হয়েছে- স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, গোলামের বদলে গোলাম, নারীর বদলে নারী (-কেই হত্যা করা হবে)। অতঃপর হত্যাকারীকে যদি তার ভাই (নিহতের অলি)-এর পক্ষ হতে কিছুটা ক্ষমা করা হয়, তবে ন্যায়ানুগভাবে (রক্তপণ) দাবী করার অধিকার (অলির) আছে। আর উত্তমরূপে তা আদায় করা (হত্যাকারীর) কর্তব্য। এটা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক লঘুকরণ এবং একটি রহমত। এরপরও কেউ সীমালংঘন করলে সে যন্ত্রণাময় শাস্তির উপযুক্ত। হে বুদ্ধিমানগণ, কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্যে জীবন রয়েছে যাতে তোমরা সাবধান হতে পার। (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত : ১৭৮-১৭৯)
অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখম সমূহের বিনিময়ে সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গুনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম। (সূরা মায়েদাহ, আয়াত : ৪৫)
উপরে উল্লেখিত আয়াতে হত্যার বিনিময়ে হত্যার মাধ্যমে জীবন বাঁচানোর কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, যখন কোন অপরাধী ঠিক সমপরিমাণ শাস্তি পাবে তখন সমাজের অন্য কেউ ওই অপরাধে জড়াতে চাইবে না এটাই মানব প্রকৃতি। সুতরাং একজনের মৃত্যুদন্ডের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের অনেকের জীবনকে নিরাপদ করা সম্ভব হবে।
তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হলো— কিসাসের শাস্তি কোন ব্যক্তি দিতে পারবে না। এর মূল দায়িত্ব সরকার বা বিচার ব্যবস্থার উপর। কোনো ব্যক্তি স্বপ্রোদিত হয়ে অপরাধের শাস্তি দিতে পারবে না।
ডিএম /সীমা