34979

07/27/2025 যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে সৌদির ‘না’: ইরানে হামলায় ক্ষেপণাস্ত্র দিতে অস্বীকৃতি

যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে সৌদির ‘না’: ইরানে হামলায় ক্ষেপণাস্ত্র দিতে অস্বীকৃতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৬ জুলাই ২০২৫ ১৪:৩৮

ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইল বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়লে, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে ‘টার্মিনাল হাই অল্টিচিউড এরিয়া ডিফেন্স’ বা থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কিছু ইন্টারসেপটর ইসরাইলকে সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছিল।

কিন্তু রিয়াদ যুক্তরাষ্ট্রের সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুই মার্কিন কর্মকর্তা।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ‘যুদ্ধ চলাকালে আমরা অনেক দেশের কাছেই অনুরোধ জানিয়েছি কিছু সরঞ্জাম দিতে। যখন কোথাও ব্যর্থ হয়েছি, তখন বিকল্প উপায় খুঁজেছি—সমঝোতা কিংবা বিনিময়। তবে এটা কোনো নির্দিষ্ট দেশের প্রতি ইঙ্গিত ছিল না।’

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব ছিল অন্যতম সেই দেশ, যারা এমন সহায়তা দিতে সক্ষম ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরান শুধু ইসরাইল নয়, বরং উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্যও হুমকি।

এই সংঘাতের সময়, যুদ্ধবিরতির মাত্র নয় দিন পর, ৩ জুলাই সৌদি সামরিক বাহিনী প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের টিএচএএডি ব্যাটারি চালু করে। এটি সৌদি সরকার তাদের নিজস্ব অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনেছিল।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করেছিল যে, ইরানের ব্যাপক ব্যালিস্টিক হামলায় ইসরাইলের জন্য সংরক্ষিত যুক্তরাষ্ট্রীয় ইন্টারসেপটরের মজুদ বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে।

মিডল ইস্ট আই-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের হামলায় ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—বিশেষ করে অ্যারো ও টিএচএএডি ইন্টারসেপটর—দ্রুত ফুরিয়ে যেতে থাকে। পরবর্তীতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও দ্য গার্ডিয়ান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে।

দ্য গার্ডিয়ান জানায়, সংঘাতের পরে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিশ্বব্যাপী সামরিক কৌশলের জন্য প্রয়োজনীয় ‘প্যাট্রিয়ট’ ইন্টারসেপটরের মাত্র ২৫ শতাংশ অবশিষ্ট ছিল।

যদিও ইসরাইলের তিনস্তরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছিল, তবু ইরান একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলি শহরগুলোতে আঘাত হানাতে সক্ষম হয়। দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র অন্তত পাঁচটি ইসরাইলি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত হানে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধ প্রমাণ করেছে, ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়ে। ‘মিচেল ইনস্টিটিউট ফর এরোস্পেস স্টাডিজ’-এর নির্বাহী পরিচালক ডগলাস বারকি বলেন, ‘আমাদের ইন্টারসেপটরের সংখ্যা সীমিত। আমাদের উৎপাদন ক্ষমতাও সীমাবদ্ধ।’

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল আরও জানায়, মার্কিন কর্মকর্তারা জানতেন সৌদি আরবের হাতে টিএচএএডি ইন্টারসেপটর আছে। তারপরও তারা সেসব ইসরাইলকে দিতে সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু সৌদি আরব সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও ইসরাইলকে ইন্টারসেপটর দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো সহায়তা এসেছে কি না, তা নিশ্চিত করেনি কোনো পক্ষ।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-ইসরাইল সংঘাত গালফ অঞ্চলের দেশগুলোকে নতুন করে ভাবিয়েছে। তারা উপলব্ধি করেছে—ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অপরাজেয় নয়। এ কারণে এসব তেলসমৃদ্ধ রাষ্ট্র এখন তাদের কূটনৈতিক অবস্থান পুনর্বিন্যাসে নেমেছে।

একজন আরব কূটনীতিক মিডল ইস্ট আই-কে বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধের পরিণাম ইতিবাচক। ইসরাইল বুঝেছে, শক্তিশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের মূল্য কত বড় হতে পারে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব এখন ধীরে ধীরে তুরস্কের দিকে ঝুঁকছে এবং প্রয়োজনে ইরানের সঙ্গেও সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে পারে। ইউরেশিয়া গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান ফিরাস মাকসাদ বলেন, ‘সিরিয়া, লেবানন, গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলের লাগাতার হামলা সৌদি আরবের অবস্থানকে কঠোর করে তুলেছে। এখন যখন ইরান দুর্বল, তখন সৌদি নতুন করে তাদের কৌশল নির্ধারণ করছে।’

ডিএম /সীমা

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]