353

04/20/2024 তদবিরবাজ সাংবাদিকদের বর্জনের সিদ্ধান্ত প্রশাসনে

তদবিরবাজ সাংবাদিকদের বর্জনের সিদ্ধান্ত প্রশাসনে

ডেস্ক রিপোর্ট

২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:৫২

ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদ এলাহীকে একটি জাতীয় দৈনিকের বিশেষ প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার ঘটনায় প্রশাসনজুড়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে।

সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজে বাধাদানকারী ও হুমকিদাতা সাংবাদিক এবং তাকে প্রশ্রয়দানকারী তদবিরবাজ হিসেবে পরিচিত আরও কয়েকজন সাংবাদিককে একযোগে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের বেশিরভাগ কর্মকর্তা। গত কয়েক দিন থেকে কর্মকর্তাদের গ্রুপ ফেসবুক পেজে এ নিয়ে নানাভাবে প্রতিবাদ জানানো অব্যাহত রয়েছে।

আইনগত প্রতিকার পেতে শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে থানায় জিডি করেছেন ইউএনও। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো গোপনীয় প্রতিবেদনে ঘটনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন ফরিদপুরের ডিসি অতুল সরকার। এতে বলা হয়, শরিফুল ও তার পিতা মশিউর রহমান অবৈধভাবে সরকারের ১নং খাস খতিয়ানের ৩১ একর জমি অবৈধভাবে ভোগদখল করছেন।

যেখানে তাদের পাকা ঘরবাড়িও রয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য সরকারের এ জমি উদ্ধার করতে গিয়ে ইউএনও এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন।

এর আগে ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ৮ ডিসেম্বর ডিসির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ইউএনও তৌহিদ এলাহী। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, শরিফুল ইসলাম তার মুঠোফোনে কল করে সরকারি খাসজমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ঘরের কাজ বন্ধ করার হুমকি দেন। একপর্যায়ে তিনি ইউএনওকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেন বলে উল্লেখ করা হয়।

ঢাকার এ সিনিয়র সাংবাদিকের বাড়ি ফরিপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে। তিনি সচিবালয় বিটের সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত।

ইউএনওকে মুঠোফোনে হুমকি দেয়াসংক্রান্ত ফোনকলের রেকর্ড প্রশাসনজুড়ে ভাইরাল হয়েছে। শরিফুলের হুমকি দেয়ার কল রেকর্ড শুনে কর্মকর্তাদের অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, কোনো সাংবাদিক এমন ভাষা ও শব্দ উচ্চারণ করে ইউএনও কিংবা কাউকে হুমকি দিতে পারেন তা তাদের চিন্তারও বাইরে ছিল। বিষয়টি তাদের হতবাক করেছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে ১৫ ডিসেম্বর দুই পৃষ্ঠার বিশেষ প্রতিবেদন পাঠান ফরিদপুরের ডিসি। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ২২০টি গৃহ নির্মাণের কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

এ কাজের অংশ হিসেবে আলফাডাঙ্গার ইউএনও ২৪নং কুচিয়াগ্রাম মৌজায় সিএস ১৪৮১নং দাগের এসএ ১৫৭৫, যা বিএস রেকর্ড ৪৯০ নং দাগের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত ৫৪ শতাংশ জমিতে ৪০টি গৃহ নির্মাণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিন্তু ৮ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে একটি জাতীয় পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম ফোন করে ইউএনওকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন।

তিনি এও বলেন, গৃহ নির্মাণ কাজ বন্ধ করা না হলে ইউএনওর ক্যারিয়ার ধ্বংস করাসহ তার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল ও বিভাগীয় মামলা করার ব্যবস্থা করা হবে। এমনকি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনওর যে অবস্থা হয়েছিল সেই রকম পরিণতি হবে আলফাডাঙ্গার ইউএনও তৌহিদ এলাহীর। এ ধরনের হুমকি কার্যত জীবননাশের হুমকির শামিল।

বিষয়টি জানার পর সংশ্লিষ্ট জমির বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে এডিসিকে (রাজস্ব) দায়িত্ব দেয়া হয়। এডিসির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, সিএস রেকর্ডে কুচিয়াগ্রাম মৌজায় খাস জমির পরিমাণ ৬২৩.৬৯ একর। এরমধ্যে বিবেচ্য ১৪৮১নং দাগে খাস জমির পরিমাণ ১৩৯.৩০ একর। যার শ্রেণি নদী।

সিএস ১৪৮১নং দাগ এসএস রেকর্ডে ১৫৩৪ হতে ১৫৬৮, ১৫৭৫ হতে ১৫৮০ এবং ১৫০৩নং দাগসহ ৭১টি দাগে রূপান্তরিত হওয়া খাস জমির পরিমাণ ২০২.৪১ একর। সর্বশেষ বিএস রেকর্ডে উক্ত মৌজায় খাস জমির পরিমাণ ১৯৩.৮৭ একর। এর মধ্যে বিএস ৪৯০নং দাগে (সিএস ১৪৮১ নং দাগ) নদী শ্রেণি হিসেবে ১৫৩.৫৬ একর জমি ১নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। এসএ ১৫৬৯ হতে ১৫৭৪ পর্যন্ত ৬টি দাগে ১.০৬ একর জমি ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত।

এসএ ১৫৬৯ হতে ১৫৭৪ পর্যন্ত ৬টি দাগে ১.০৬ একর হালট শ্রেণির জমি (যার সিএস দাগ নং১৪৮১ ও বিএস দাগ নং ৪৯০) তঞ্চকতাপূর্বকভাবে কতিপয় ব্যক্তির নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে, যা সর্বসাধারণের ব্যবহার্য বলে উল্লেখ রয়েছে। তব উক্ত দাগগুলোর জমির সঙ্গে সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম ও তার পিতার দাবিকৃত জমির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

কিংবা গৃহ নির্মাণের জন্য নির্বাচিত জমিরও কোনো যোগসূত্র নেই। গৃহ নির্মাণের জন্য নির্বাচিত ভূমি সিএস, এসএ এবং বিএস তিনটি রেকর্ডেই সরকারের নিষ্কণ্টক খাস খতিয়ানভুক্ত জমি। উক্ত জমি শরিফুল ইসলাম ও তার পিতা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভোগদখল করে আসছিলেন।

ডিসির রিপোর্টে আরও বলা হয়, শরিফুল ইসলাম ও তার পিতা মশিউর রহমান এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন পারস্পরিক যোগসাজশে ২৪নং কুচিয়াগ্রাম এসএস ১৫৩৪ হতে ১৫৬৮, ১৫৭৫ হতে ১৫৮০ এবং ১৫০৩ নং দাগসহ ৪২টি দাগে ৩১.০৩ একর খাস জমি অবৈধভাবে ভোগদখল করছেন। যার বিএস দাগ নং ৪৯০, ৫৪৫, ৫৪৯, ৫৫০, ৫৫১, ৫৫৩, ৫৫৪, ৫৫৫, ৫৫৬ ও ৫৫৮সহ ১২টি দাগ। এমনকি শরিফুল ইসলাম সরকারি ১নং খাস খতিয়ানের সিএস ১৪৮১, এসএ ১৫৬৭ এবং বিএস রেকর্ডের ৪৯০নং দাগের ৫০ শতাংশ খাস জমিতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন। শরিফুল ইসলামগং কর্তৃক অবৈধভাবে দখলকৃত ভূমির সপক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য রেকর্ডপত্র তদন্তকালে উপস্থাপন করতে সক্ষম হননি।

স্থানীয় অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে এ প্রতিবেদনের শেষদিকে বলা হয়, শরিফুল ইসলামের পূর্বপুরুষ নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলাধীন চর শালনগর ইউনিয়নের চর চাকশী মৌজার স্থায়ী বাসিন্দা। তার পিতা মশিউর রহমান বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের পরিবার আনুমানিক ২০০৮ সালের দিকে আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে বসবাস শুরু করেন।

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র গত ২ সপ্তাহ ধরে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট ইউএনওর ব্যাচমেটসহ প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যাচের সিনিয়র-জুনিয়র কর্মকর্তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে একাট্টা।

ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদের গ্রুপ ফেসবুকে এর আভাস পাওয়া গেছে। সেখানে শরিফুল ইসলামের অন্যতম সহযোগী হিসেবে ঢাকায় কর্মরত আরও একজন সিনিয়র সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে তাদের সচিবালয়সহ প্রশাসনের সর্বত্র অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]