যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে এসেছে। শুল্ক কমাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টা সফল হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো স্বাগত জানিয়েছে। পাশাপাশি শুল্ক কামনোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেসব চুক্তি বা প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে, যা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন নেতারা। নতুন বাজার খোঁজার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
বিএনপির সন্তোষ
যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির শুল্ক কমানোর সংবাদকে দেশের জন্য ভালো খবর বলে অভিহিত করেছে বিএনপি। তারা এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল শুক্রবার ঢাকার আজমপুরে এক সমাবেশে বলেন, আজ একটা ভালো খবর আছে। আপনারা দেখেছেন কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৫% শুল্ক আরোপ করেছিল। এটাকে আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং উপদেষ্টারা আলোচনা করে ২০ শতাংশে নিয়ে এসেছেন। সেজন্য আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা একটা বড় দায়িত্ব পালন করেছেন।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটা জয়-পরাজয়ের কোনো বিষয় না। যে শুল্ক নির্ধারণ হয়েছে তাতে প্রতিযোগিতায় আমরা তুলনামূলকভাবে সন্তোষজনক অবস্থানে। আমরা ২০ শতাংশ, পাকিস্তান ১৯ শতাংশ, ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ ও ভারতে ২৫ শতাংশ। তবে পুরো দেনদরবারের সার্বিক বিষয়টা আমাদের জানা নেই। আমরা শুধু শুল্কের বিষয়টা জানি। সার্বিক বিষয় জানার পরে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব। শুল্কের বিপরীতে কী দিতে হয়েছে, তা না জানা পর্যন্ত এর ফল কী হবে বলতে পারছি না।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সমঝোতার পেছনের বিষয়গুলো কী। এটা তো একটা প্যাকেজ। এখানে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু শুল্কের কত শতাংশ কমানো হলো সেই সিদ্ধান্ত হয়নি। এই সিদ্ধান্তের পেছনে অনেক আলাপ-আলোচনা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কী দাবি-দাওয়া ছিল এ বিষয়গুলো প্রকাশ হলে আমরা বুঝতে পারব।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক নির্ধারণে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন। এখন তারা স্বস্তির মধ্যে এসেছেন বলে মনে করেন কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি তো বলছি, আপাতত শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ অন্তত এই মুহূর্তে আমাদের রপ্তানিবাজার বাধাগ্রস্ত করবে না। সুতরাং এই মুহূর্তে এটা সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত।
সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার একটা কথা বলেছেন। এটার সঙ্গে শুল্কের কোনো সম্পর্কের ইঙ্গিত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু তো করতেই হবে। কারণ শুল্কের পুরোটাই মার্কিন স্বার্থ জড়িত। আমীর খসরু বলেন, এটা শুধু শুল্কের বিষয় নয়। এর পেছনের আরও যে বিষয়গুলো জড়িত আছে, সেগুলো বিবেচনায় আনতে হবে। এটাই আগামী দিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের রপ্তানিকারকরা আপাতত স্বস্তি পেয়েছেন বলে আমি মনে করি। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত পুরো বিষয়টি খোলাসা করা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শুল্ক কমানোর বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা সরকারের তরফ থেকে পাইনি। পাওয়ার পরই আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাব।
জামায়াতের ধন্যবাদ
জামায়তে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে উচ্চ শুল্কহার ঘোষণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশ সরকারের কার্যকর উদ্যোগ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তরিকতায় তা কমে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আশা করছি, ভবিষ্যতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পরবর্তীতে যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসবেন, তারা সম্মানজনক অবস্থান ধরে রেখে বিশ্ব কূটনীতির ময়দানে মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন। এ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ।’
তার এই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই প্রশ্ন করেন, এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে। এসব কমেন্টের উত্তরে জামায়াতের আমির লেখেন, ‘যদি সত্যিই এমন কিছু হয়ে থাকে, তাহলে সরকারের উচিত হবে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা। যাতে জনগণ তা স্পষ্টভাবে জানতে পারে। যেহেতু জনগণই রাষ্ট্রের সম্পদের মালিক, তাই এ বিষয়ে জনগণকে অবশ্যই অবহিত করতে হবে।’
এক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সরকারি যোগাযোগের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ শুল্ক কমানো হয়েছে, এটা অবশ্যই একটি অগ্রগতি। তবে আমরা চাই শুল্ক আরও কমাতে হবে এবং সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি সরকার এখানেই থেমে থাকবে না। শুল্ক কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্য আলোচনায় আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে।’
সরকারের বড় কূটনৈতিক সাফল্য: এনসিপি
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শুল্ক কমানোর বিষয়টিকে অন্তর্বর্তী সরকারের বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখছে। দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব এবং এসএমই উইংয়ের সদস্য আকরাম হোসেন বলেন– ‘এটা আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক। পোশাক কারখানার লাখ লাখ কর্মী রয়েছেন। এটা দেশের অন্যতম বড় শিল্প, যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে। দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ধরে রেখেছে এই গার্মেন্ট শিল্প। এর সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছে। দেশটি বাংলাদেশের জন্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক ধরেছিল, তা যদি থাকত তাহলে এ দেশের পোশাকশিল্প মুখ থুবড়ে পড়ত। দেশের বড় ক্ষতি হতো। সেদিক থেকে শুল্ক কমানো বর্তমান সরকারের বড় কূটনৈতিক সাফল্য। ভারতের শুল্ক বাংলাদেশের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি ধরেছে যুক্তরাষ্ট্র। পোশাক রপ্তানিতে যারা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী, যেমন ভিয়েতনাম তাদের শুল্কহার বাংলাদেশের কাছাকাছি হওয়ায় এ দেশে ব্যবসা করা সহজ হবে।