বৃষ্টির পর নরম হয়ে ওঠা জমিতে ফিরে এসেছে প্রাণ। চাষাবাদের উপযোগী হয়ে উঠায় মৌলভীবাজারের হাওড়পাড়ে শুরু হয়েছে আমন ধানের চারা রোপণ। সকাল থেকে সন্ধ্যা—দিনভর মাঠজুড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। সবার চোখেমুখে স্বস্তির ছাপ, মুখে হাসি। মনে হচ্ছে, তারা যেন শুধু চারা নয়, জমিতে আশা বুনছেন।
গত বছরের খরা ও বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছিল, তা কাটিয়ে উঠতে এ মৌসুমের শুরু থেকেই কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন কৃষকরা। জমি প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে চারা রোপণের সব কাজই চলছে নিরবচ্ছিন্নভাবে।
হাওড়পাড়ের মাঠজুড়ে এখন শুধুই কাজের ধ্বনি। কৃষকের ঘামে ভেজা মাটিতে যেন ফুটে উঠছে জীবনের নতুন গল্প। আমন ধান চাষকে ঘিরে মাঠে সৃষ্টি হয়েছে ছোট্ট এক উৎসবের আমেজ, যা নতুন ফসলের আশায় প্রতিটি কৃষকের মনে জাগাচ্ছে এক টুকরো স্বপ্ন।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ৯৮ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্য ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৯ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে জেলার অর্ধেকের বেশি জমিতে চাষাবাদ সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে অধিক আবাদ নিশ্চিত করতে সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করেছে। ফলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে আমন চাষ হবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
হাওড়পাড়ের কৃষকরা জানান, হাওড় এলাকার জমিগুলোতে বছরে দুই ধরনের ফসল আবাদ করা হয়। বর্ষা শেষে পানি সরে যাওয়ার পর রোপা আমন ধান চাষ করা হয়। এরপর একই জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। বোরো ফসলে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নেওয়া কঠিন। তারপরও আমন ফসলে আশার আলো দেখছেন তারা।
সম্প্রতি সরেজমিনে কাউয়াদিঘি হাওড়পাড়ের সদর ও রাজনগর উপজেলার অন্তেহরি, কাদিপুর, জগৎপুর, পাড়াশিমইল, বড়কাপন, খৈশাউড়া, কুবজারসহ বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা সকাল-সন্ধ্যা আমন ধানের চারা রোপণে চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ জমির আইলে কোদাল দিয়ে কাজ করছেন, আবার কোথাও মাঠ সমান করতে পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে মই দেওয়া। কোনো কোনো স্থানে কৃষকরা নিজেরাই মই টেনে জমি সমান করছেন।
কাউয়াদিঘি হাওড়পাড়ের রসুলপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর আহমদ বলেন, ‘গতবার ধানের দাম কম ছিল, তবে এবার দাম বেশি হবে বলে আশা করছি। আমি এবার ১১ কিয়ার জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করছি।’
পাড়াশিমইল গ্রামের কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, ‘গত বছর ৬ মন ধান পেয়েছিলাম, এবার আরও বেশি ধান পাব বলে আশা করছি। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তাহলে ফলন ভালোই হবে।’
বানেশ্রী এলাকার কৃষক সুভাষ সরকার বলেন, ‘এবার ২৪ কিয়ার জমিতে রোপা আমন চাষ করছি। বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা এখন পুরোদমে চারা রোপণে ব্যস্ত।’
হাওড় রক্ষা সংগ্রাম কমিটির মৌলভীবাজার সদর উপজেলা শাখার সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে চারা রোপণে বিলম্ব হচ্ছে, এতে চারা গাছের বয়স বেড়ে যাচ্ছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার, বীজসহ সার্বিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যা এ বছর ভালো ফলনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে জেলার অর্ধেকেরও বেশি জমিতে চাষাবাদ সম্পন্ন হয়েছে।’
ডিএম/রিয়া