ভারতে ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, খেলার চেয়েও যেন বেশি কিছুই। কোটি মানুষের আবেগ জড়িয়ে এতে। বিশাল জনগোষ্ঠীর নজর থাকে দলের ওপর। সেই দলের জার্সির বুক জুড়ে যদি কোনো ব্র্যান্ডের লোগো জায়গা পায়, তবে তা যে বাড়তি পরিচিতি পেয়ে যাবে, তা আর বলতে। বিসিসিআই মানেই মাইডাস—যার স্পর্শেই সব সোনায় রূপান্তরিত হয়, স্পনসরদের এমন ভাবনাও তাই অমূলক নয়।
কিন্তু ইতিহাস আবার ভিন্ন কথাই বলছে। সোনার বদলে অনেক স্পনসরই ডুবেছে অন্ধকারে, লেগেছে ‘অভিশাপ’। সেই সাহারা ইন্ডিয়া থেকে শুরু, সবশেষ এই তালিকায় যোগ দিয়েছে ড্রিম ইলাভেন। ভারতের নতুন গেমিং আইনের কারণে পাততাড়ি গোটাতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটাকে।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ২০০১ সালে সাহারা গ্রুপ ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম। তারা জার্সি স্পনসরশিপের মাধ্যমে গড়ে তোলে নিজেদের শক্তিশালী উপস্থিতি। কিন্তু এক দশক না যেতেই আর্থিক কেলেঙ্কারি আর আইনি জটিলতায় ধসে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর আসে স্টার ইন্ডিয়া। সম্প্রচার জগতে তাদের আধিপত্য ছিল স্পষ্ট, কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে তারা জড়িয়ে গেল তদন্ত ও আর্থিক চাপে, যার প্রভাব পড়ল তাদের স্পনসরশিপ চুক্তিতেও।
চীনা ফোন ব্র্যান্ড অপ্পো ভারতীয় ক্রিকেটের জার্সি স্পনসর হয়েছিল বড় আশা নিয়ে। কিন্তু সীমান্তে রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং ভারত-চীন সম্পর্কের অবনতির কারণে তাদের সরে যেতে হয়।
বাইজুস আসে এরপর। ভারতের সবচেয়ে আলোচিত এডটেক কোম্পানি ছিল প্রতিষ্ঠানটি। তারা শুধু ভারতীয় দলের জার্সিই স্পনসর করেনি, বরং বিশ্বকাপ ও ফিফার মতো ইভেন্টেও নিজেদের উপস্থিতি জানিয়েছিল। অথচ অতিদ্রুত সম্প্রসারণের ভারটা নিতে পারেনি এই প্রতিষ্ঠান। শেষমেশ দায়বদ্ধতার ভারে ডুবে যায় বাইজুস, একসময় দেউলিয়াই হতে হয় তাদের।
সবশেষে এসেছে ড্রিম১১। ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এই ফ্যান্টাসি স্পোর্টস প্ল্যাটফর্ম ভারতের সবচেয়ে বড় অনলাইন গেমিং কোম্পানি হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সরকারের নতুন অনলাইন গেমিং আইন পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের ব্যবসায় নেমেছে ধস। ফলে বিসিসিআইয়ের সঙ্গে তাদের ৩৫৮ কোটির চুক্তি এখন ঝুঁকির মুখে। এশিয়া কাপের আগেই তারা সরে গেছে জার্সি স্পনসরশিপ থেকে।
এই গল্পগুলোকে তুলনা করা যায় বলিউডের সাথে। একসময় শাহরুখ খান, সালমান খান কিংবা আমির খানের নাম শুনলেই সিনেমা হিট নিশ্চিত ধরা হতো। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। বড় বাজেটের সিনেমাও আজকাল ব্যর্থ হয়, যদিও তারকার উপস্থিতি দর্শকের দৃষ্টি কাড়ে। স্টারডম গ্যারান্টি দিলেও সাফল্যের নিশ্চয়তা দেয় না। একইভাবে ভারতীয় দলের জার্সি স্পনসরশিপও আলো আর প্রচার নিশ্চিত করে বটে, কিন্তু সেই আলো টেকসই হয় না বেশিরভাগ সময়েই।
বিসিসিআইয়ের জার্সি স্পনসরশিপ এক ধরনের বড় ঝুঁকির বাজি। প্রচার আর গ্ল্যামার—সবকিছু মিলিয়ে এটিই দেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু অতীত বলছে, সেই আলো যেন আগুন হয়ে পুড়িয়ে ফেলে সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডকে।
তাই বলে অবশ্য এই স্পনসরশিপের খেলাটা থেমে থাকে না। বিসিসিআই নতুন স্পনসর পাবে, যেমন আগেও পেয়েছে।
এখন আক্ষরিক অর্থেই মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন উঠে আসছে। এমন অতীতের কথা মাথায় রেখে লাখো কোটি রুপি খরচ করতে চাইবে কোন প্রতিষ্ঠান?
ডিএম/রিয়া