গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগের পর যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ চিকুনগুনিয়া ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন ইক্সচিকের লাইসেন্স স্থগিত করেছে। সোমবার ভ্যাকসিনটির ফরাসি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভ্যালনেভা এই তথ্য জানিয়েছে বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) অনুমোদিত মশাবাহিত এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে দুটি টিকার একটি ইক্সচিক। ভাইরাসটি সাধারণত উষ্ণমণ্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে দেখা গেলেও গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফরাসি ওষুধ কোম্পানি ভ্যালনেভা ২০২৩ সালে এই টিকার মার্কিন অনুমোদন পায়। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার একাধিক ঘটনার কারণে ভ্যাকসিনটির ব্যবহার নিয়ে—বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপীয় মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) চলতি বছর বিষয়টি নিয়ে আলাদা পর্যালোচনা শুরু করেছিল।
কোম্পানির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এফডিএর নির্দেশনা অনুযায়ী ইক্সচিক ভ্যাকসিনের লাইসেন্স স্থগিতের সিদ্ধান্ত গত শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে। নতুন করে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চারটি ঘটনা শনাক্ত হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এফডিএ। ওই চারজনের মধ্যে তিনজনের বয়স ৭০ থেকে ৮২ বছরের মাঝে।
ডিএম/রিয়া
ভ্যালনেভার প্রধান নির্বাহী থমাস লিঙ্গেলবাচ বলেছেন, ‘‘আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ বিবেচনা করছি এবং বিশ্বজুড়ে চিকুনগুনিয়ার হুমকি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সরঞ্জাম হিসেবে আমাদের ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা বজায় রাখার বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’
কোম্পানিটি বলেছে, লাইসেন্স স্থগিতের আর্থিক প্রভাবের বিষয়টি তারা পর্যালোচনা করে দেখছে। তবে আপাতত কোম্পানির আয়ের পূর্বাভাসে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভ্যাকসিনটির বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলারের বিক্রি হয়েছে।
লাইসেন্স স্থগিতের ঘোষণা আসার পর সোমবার সকালে প্যারিসের স্টক এক্সচেঞ্জে ভ্যালনেভারের শেয়ারের দরে ২৬ শতাংশের বেশি পতন ঘটেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নতুন নতুন অঞ্চলে মশার বিস্তারে চিকুনগুনিয়া ভবিষ্যতে মহামারির আকার ধারণ করতে পারে। এই ভাইরাসের উপসর্গগুলো ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসের মতো—তীব্র জ্বর ও জয়েন্ট ব্যথা। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে উপসর্গগুলো অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্বল হয়ে পড়েন।
চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যু বিরল হলেও শিশু ও বৃদ্ধদের ঝুঁকি অনেক বেশি। গত জুলাইয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, চিকুনগুনিয়ার কারণে বড় ধরনের মহামারি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই মহামারি ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায় বৈশ্বিক এই স্বাস্থ্য সংস্থা।
ডব্লিউএইচও বলেছে, বর্তমানে চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি অনেকটা সেই প্রাথমিক সংকেতের মতো, যা প্রায় দুই দশক আগে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের আগে ছড়িয়ে পড়েছিল। চলতি বছর ইউরোপে ২৭টি চিকুনগুনিয়া প্রাদুর্ভাব রেকর্ড করা হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বলে ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি) জানিয়েছে।