জাল জালিয়াতি ও মিথ্যা হিসাবপত্র তৈরি করে এলসির বিপরীতে কয়লা আমদানি এবং খালাস করে ব্যাংকের প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে পৃথক চার মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
চার মামলায় ব্যাংক কর্মকর্তা খান মো. হাফিজুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে বলে রোববার (৩১ আগস্ট) সংস্থাটির জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- মেসার্স আয়শা ট্রেডিংয়ের মালিক মোছা. ফাতেমা বেগম, মেসার্স তাহমিদ ট্রেডিংযের মালিক নাজমা খাতুন, মেসার্স এস এম কর্পোরেশনের মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মেসার্স এস রেজা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শাহীন রেজা ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের যশোরের নওয়াপাড়া শাখার সাবেক ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইনচার্জ, বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগ খান মো. হাফিজুর রহমান।
প্রথম মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৫২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৮ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬২ কোটি ১৭ লাখ টাকার কয়লা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার, জাল জালিয়াতি ও মিথ্যা হিসাবপত্র তৈরি করে এলসির বিপরীতে কোনো প্রকার মার্জিন না দিয়ে মোংলা বন্দর থেকে কয়লা আমদানি ও খালাস করলেও ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ৫২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৮ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬২ কোটি ১৭ লাখ টাকার কয়লা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩১ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার আসামিরা হলেন- মেসার্স তাহমিদ ট্রেডিংয়ের মালিক নাজমা খাতুন ও ওই ব্যাংক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান। আসামিরা একই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার, জাল জালিয়াতি ও মিথ্যা হিসাবপত্র তৈরি করে এলসির বিপরীতে কোনো প্রকার মার্জিন না দিয়ে মোংলা বন্দর থেকে কয়লা আমদানি ও খালাস করলেও ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করেনি। এখানে ২০২২ সালের ২ মে থেকে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ২৬ লাখ ১৬ হাজার মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩১ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার টাকার কয়লা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অন্যদিকে তৃতীয় মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩২ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় আসামিরা হলেন- মেসার্স এস এম কর্পোরেশনের মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও ব্যাংক কর্মকর্তা খান হাফিজুর রহমান। আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার, জাল জালিয়াতি ও মিথ্যা হিসাবপত্র তৈরি করে এলসির বিপরীতে কোনো প্রকার মার্জিন না দিয়ে মোংলা বন্দর থেকে কয়লা আমদানি ও খালাস করে ২৬ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩২ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকার কয়লা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আসামিরা ওই টাকা আত্মসাৎ করে।
চতুর্থ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ১০ কোটি ৮৭ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার আসামিরা হলেন- মেসার্স এস রেজা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শাহীন রেজা ও ব্যাংক কর্মকর্তা খান হাফিজুর রহমান। আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার, জাল জালিয়াতি ও মিথ্যা হিসাবপত্র তৈরি করে এলসির বিপরীতে কোনো প্রকার মার্জিন না দিয়ে মোংলা বন্দর থেকে কয়লা আমদানি ও খালাস করে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ কোটি ৮৭ লাখ ১০ হাজার টাকার কয়লা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০২২ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আসামিরা ওই টাকা আত্মসাৎ করে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭ক/১০৯ তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।