‘মুক্তি’ সিনেমাটি দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন রাজ রিপা। কিন্তু ৮ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ছবিটি। ফলে হতাশ নায়িকা। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে নিজের হতাশা তুলে ধরে জানিয়েছেন, সিনেমা করার শখ মিটে গেছে তার। এবার রাজ রিপার ওই পোস্ট শেয়ার দিয়ে বর্ষা পরামর্শ দিলেন নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শান্তি চাইতে।
আজ মঙ্গলবার নিজের ফেসবুকে রিপার পোস্ট শেয়ার দিয়ে বর্ষা লিখেছেন, ‘স্বপ্ন মাটি চাপা দিবা দাও কিন্তু এমন স্বপ্ন মাটি চাপা দিও না যে স্বপ্ন জেগে আছে কিন্তু ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তোমার জীবনের সিদ্ধান্ত তোমাকেই নিতে হবে, যার কেউ নেই তার জন্য আল্লাহ আছেন। তোমার মতো কেউ কেউ এমন কঠিন জীবন যাপন করছে এই মিডিয়ায় তা তুমি আমি ভালো করে জানি।’
এরপর লেখেন, ‘আমাকে নিয়ে ভেবে দেখবা, আমি ইচ্ছা করলে নিজেই সিনেমায় ইনভেস্ট করতে পারি কিন্তু আমার কাছে এসব কিছুই আর ভালো লাগে না। আসলে ভালো মন, নরম মনের মেয়েদের জন্য এই রঙিন জীবন না রিপা! চামড়া যাদের অনেক শক্ত শত শত কমেন্টের জন্য যাদের কিছু আসে যায় না তারাই এই জীবনে ভালো থাকবে।’
অনন্ত জলিলের স্ত্রী আরও লেখেন, ‘মিলিয়ে নিও, তুমিও জানো ভালো করে কী করলে কী হয়। নামাজ পড়ে আল্লাহ পাককে বলো, তোমার মনে যেন শান্তি পায়। আর আমিও গিয়েছিলাম তোমার এই মুক্তি সিনেমার মহরতে, অবাক হলাম এই সিনেমা এখনও শুটিং শেষ হয়নি? যদি ভুল না হয়, ২০২০ সালের অক্টোবত কিংবা ডিসেম্বরে মহরত হয়েছিল।’
সবশেষে রাজ রিপাকে বর্ষার পরামর্শ, ‘নতুন শুরু দিয়ে নতুন স্বপ্ন নিয়ে জীবনকে আবার ভাবতে শিখতে পার। হেরে যাওয়া কিন্তু সমাধান নয়। দোয়া রইলো তোমার জন্য বয়স আর কত তোমার, অনেক সময় পড়ে আছে তোমার জন্য, নিজেকে নতুন ভাবে সাজাও। বোকা মেয়ে তুমি। ব্যর্থ তুমি হওনি। ব্যর্থ সেই যে তার ওয়াদা রক্ষা করতে পারেনি!’
নিজের ওই পোস্টে রাজ রিপা লিখেছিলেন, ‘খুব দ্রুত সবাইকে ছেড়ে চলে যাব। এই ইন্ডাস্ট্রি আমার মতো বোকা মানুষের জন্য না। একা একা ৭ বছরের পথ পাড়ি দিয়েছি। ভালো-মন্দ সবকিছু দেখেই সিদ্ধান্ত নিলাম। আলহামদুলিল্লাহ কারও সাথে না বেইমানি করেছি, না কাউকে ঠকিয়েছি, শুধু ঠকেই গেলাম।’
পরিচালক ইফতেখার চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে অভিনেত্রী বলেছিলেন, “কারও কাছে এক টাকা দেনা নাই। কিন্তু পাওনাদার হিসাবে পরিচালক ইফতেখার চৌধুরীর কাছে কিছু হিসাব বাকি আছে। হয়তো তিনি আমার ঋণ শোধ করবেন আর নয়তো গায়ের জোরে নিজেকে সরিয়ে নেবেন। ৪ বছর ধরে আমার পরিশ্রমের প্রজেক্ট এই ‘মুক্তি’ সিনেমা নিয়ে মানসিক যে যন্ত্রণা পেয়েছি। টাকা ও সময়ের জন্য। আমার জায়গায় অন্য মেয়ে হলে সুইসাইড ছাড়া কিছু ভাবত না।”
নিজের মানসিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি আরও লিখেছিলেন, “বার বার ডিপ্রেশনে পড়েও একা একা উঠে দাঁড়িয়েছি। মনের জোরে আর কত অপেক্ষা করবো? আর কতো ধৈর্য্য ধরতে হবে আমার? আর এখন ‘মুক্তি’ সিনেমার বাকি কাজ শেষ করার জন্য সিনেমার স্পন্সরের জন্য মেন্টালি প্রেসার নিতে পারছি না। একটা সিনেমার স্পন্সর আনার দায়িত্ব পরিচালকের, আর্টিস্টের না। তবুও চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। আমাকে নায়িকা বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে শুধু নিজের আখের গুছিয়ে গেলেন। আমার জন্য কিছুই করলেন না। তবুও কি করতে পারলেন তিনি ৮ বছরে ‘মুক্তি’ ছাড়া কোনো সিনেমা নেই। তার শেষ কাজ একটা বিউটি প্রোডাক্টের ইভেন্ট করা, সেটাও আমার এনে দেওয়া।”
রাজ রিপা যোগ করেছিলেন, ‘দুঃখ শুধু একটাই তাঁর খারাপ সময় পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম আর তিনি আমার সুন্দর সময় গুলোর ১২টা বাজিয়ে দিলন। শুধু তার অসুস্থতার বাহানায় আটকে আছে সব। সাথে আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ছি মেন্টালি। জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘ময়না’ সিনেমা রিলিজে তাও নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে রেখেছি। কিন্তু এইবার সিনেমা করার শখ সত্যিই মিটে গেছে। পরিচালকে রেগে কিছু বলতে গেলে বলে সিনেমার হার্ডডিস্ক নষ্ট করে ফেল্লে নাকি কিছুই করার থাকবে না। আমার সিনেমায় আমাকে হুমকি।’
সবশেষে একগুচ্ছে প্রশ্ন তুলে লিখেছিলেন, ‘কি করব? কার কাছে বিচার চাইব? মরতে তো হবে, বিচার আল্লাহ করবেন তাই না? আল্লাহর কাছে বেইমানির জবাব তুলে রাইখেন। ভাগ্যিস নিজে নিজে কিছু কাজ করে মনের শখগুলো পূরণ করছিলাম। তবুও আজকের পর থেকে আর না। এই শহর ছেড়ে সত্যিই চলে যাব। এই শহরের পরিচিত মানুষগুলোকেও আর চিনতে চাই না। সত্যিই এই ইন্ডাস্ট্রি আমার জন্য না। আমার অনেক রাগ আর এজন্য যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি মাপ করে দিয়েন। নিজের সাথে নিজের স্বপ্নকে মাটি চাপা দিলাম। আমার মতো এমন অসংখ্য স্বপ্নবাজরা এভাবেই হেরে যায় বেইমানের কাছে।’