সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের নাড়ুয়া গ্রামে কাঁচা রাস্তার বেহাল দশায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রামবাসী। এই রাস্তার বেহাল দশায় সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় পথেই নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন (ইউপি) নির্বাচনের আগে একাধিকবার রাস্তা পাকাকরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামেশ্বরগাতী পাকার মোড় থেকে নাড়ুয়া ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার রাস্তা এখনো কাঁচা। সড়কের দুপাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। কোথাও পানি জমে আছে, কোথাও কাদায় ভরা। রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ তিনটি ছোট ব্রিজ। ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এই পথে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত ভ্যান, মিশুক গাড়ি, মোটরসাইকেল ও সাইকেলের যাত্রী।
রাস্তা দিয়ে চলাচল করে নাড়ুয়া, তেঘুরী, বেংনাই, কাঠারবাড়িয়া ও মাটিকোড়া গ্রামের অন্তত ১০–১২ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে স্কুল–কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও। বৃষ্টির দিনে কাদার কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারে না।
সুমাইয়া ইয়াসমিন, আবু কালাম ও কামাল নামের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, রাস্তা পাকা হলে আমরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারব। জরুরি রোগীও সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাবে। ডেলিভারি রোগী কিংবা জরুরি অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিতে গিয়ে ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি।
শরিফুল ইসলাম নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে বৃষ্টির মধ্যে একজন প্রসূতিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে যথাযথ পরিবেশ না থাকায় রাস্তার ওপরই বাচ্চার জন্ম হয়। সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় নবজাতকের মৃত্যু ঘটে। রাস্তার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ধান নিয়ে হাটে যাওয়ার সময় উঁচু ব্রিজে ভ্যান উল্টে পড়ে শাহেদ আলী নামের এক কৃষক মারা যান বলেও তিনি জানায়।
কৃষকেরা জানান, রাস্তা খারাপ থাকায় পরিবহন খরচও তিনগুণ বেড়েছে। এক মণ ধান বাজারে নিতে আগে ভাড়া লাগত ১০ টাকা, এখন দিতে হচ্ছে ৩০ টাকা। তবু মাঝে মাঝে গাড়ি উল্টে পণ্য নষ্ট হয়ে যায়।
জব্বার আলী নামের এক পথচারী (কৃষক) বলেন, রাস্তা পাকা হলে কৃষকরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। উৎপাদিত ধানসহ অন্যান্য ফসল সহজে বাজারে নিতে পারবেন। ব্যবসায়ীরাও সরাসরি গ্রামে এসে পণ্য কিনবেন। এতে গাড়ি ভাড়ার খরচ কমবে।
ভ্যানচালক আব্দুল মান্নান বলেন, এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের কষ্ট ভাষায় বোঝানো যাবে না। অনেক সময় যাত্রীদের নামিয়ে আবার তুলতে হয়। বৃষ্টির দিনে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করি।
স্থানীয় বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক এস এম কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা বারবার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে এই রাস্তা পাকাকরণের প্রতিশ্রুতি শুধু কাগজেই আছে। বাস্তবে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
আপনারা শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাড়ুয়া গ্রামের মানুষ ভোট নেন। তবে রাস্তা পাকা করেন না বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা এমন প্রশ্নের জবাবে পাঙ্গাসী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেন, খুব দ্রুতই রাস্তা পাকা করে দেওয়া হবে। ইনশাআল্লাহ।
এ বিষয়ে জানতে রায়গঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) রবিউল আলমের মোইবাল ফোনে একাধিকবার কল দিলে তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ওই রাস্তার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। রাস্তার কাজ শুরু হবে।