39953

10/19/2025 ইডেন-বদরুন্নেসায় সহশিক্ষা: নারীশিক্ষার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার পরিপন্থি

ইডেন-বদরুন্নেসায় সহশিক্ষা: নারীশিক্ষার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার পরিপন্থি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:০২

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা কলেজে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রস্তাব নারীশিক্ষার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেলেন জেরিন খান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইডেন কলেজের সাবেক ছাত্রী খন্দকার ফারহানা ইয়াসমিন আতিকা, অধ্যাপক ফাহমিদা আমিন, অধ্যাপক নিসরাত বেগম, অধ্যাপক সৈয়দা সুলতানা সালমা ও ফাহিমা আক্তার মুকুল প্রমুখ।

হেলেন জেরিন খান বলেন, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাত সরকারি কলেজকে ঘিরে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন ও প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও নাগরিক সমাজে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইডেন মহিলা কলেজ উপমাহাদেশের প্রথম নারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রায় ২২,০০০ শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। অসংখ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশে সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে জাতির অগ্রযাত্রায় অবদান রাখছেন। তবে সম্প্রতি ঘোষিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ সংক্রান্ত প্রস্তাব ও নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে এই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা সংকোচন ও স্বাতন্ত্র্য বিনষ্ট হওয়ার আশংকা প্রবল হয়েছে।

সভায় ইডেনের সাবেক শিক্ষার্থীরা বলেন, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা কলেজ দীর্ঘকাল ধরে নারীশিক্ষার অগ্রযাত্রায় অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষত ধর্মপ্রাণ ও নিম্ন-আয়ের পরিবারের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলো নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র। কিন্তু খসড়া অধ্যাদেশের ৬ (১)(খ) ধারা অনুযায়ী ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজে সহশিক্ষা চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে; যা নারীশিক্ষার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার পরিপন্থি। এটি নারী শিক্ষার্থীদের পছন্দের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে এবং শতবর্ষব্যাপী নারী শিক্ষার ঐতিহ্য নষ্ট করবে।

তারা বলেন, প্রস্তাবিত সংকোচন কার্যকর হলে রাজধানীতে নারীদের উচ্চশিক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে, তাদের প্রবেশাধিকার সংকীর্ণ হবে এবং সংবিধান প্রদত্ত সমান সুযোগের নিশ্চয়তা লঙ্ঘিত হবে।

ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ সেশনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার সময় আসন সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা হয়েছে। ফলে দেশের বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে এবং তুলনামূলক সামর্থ্যবান অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকবে, যা শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বাড়াবে।

সাবেক শিক্ষার্থীরা বলেন, জাতীয় ইতিহাস ও সামাজিক বাস্তবতায় ইডেন মহিলা কলেজকে বিলুপ্ত বা একীভূত করার উদ্যোগ অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত হবে। সাতটি কলেজের বিদ্যমান অবকাঠামো, সক্ষমতা ও ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনা করে ফেডারেল, কলেজিয়েট বা অধিভুক্তিমূলক কাঠামোর আওতায় রাখা যেতে পারে। শিক্ষকদের পদ সংখ্যা বৃদ্ধি, গবেষণা বাজেট বৃদ্ধি, আধুনিক ল্যাব স্থাপন, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি স্থাপন, আবাসন ও বৃত্তি সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।

তারা বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত যৌক্তিক করতে হবে। পাশাপাশি পাঠদানকৃত বিষয়সমূহ ও সিলেবাস পুনর্বিবেচনা করে যুগোপযোগী করতে হবে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের স্বার্থ সুরক্ষা করে শিক্ষার পরিবেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। সেই সঙ্গে সকল অংশীজনের জানার অধিকার ও তথ্যের স্বচ্ছতা বজায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।

এ সময় সাবেক শিক্ষার্থীরা বলেন, ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরা সহশিক্ষা কার্যক্রম চান না এবং সহশিক্ষা যেন চালু না করা হয়।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]