4073

04/19/2024 মিটফোর্ড থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ও বিদেশি ওষুধ জব্দ, আটক ৩

মিটফোর্ড থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ও বিদেশি ওষুধ জব্দ, আটক ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:৫২

নকল ওষুধ বিক্রির অভিযোগে রাজধানীর পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানার মিটফোর্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ফার্মেসি ও গোডাউন থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ জব্দসহ তিনজনকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ।

আটকরা হলেন- মেডিসিন ওয়ার্ল্ড ফার্মেসির ফয়সাল আহমেদ (৩২), লোকনাথ ড্রাগের সুমন চন্দ্র মল্লিক (২৭) ও রাফসান ফার্মেসির মো. লিটন গাজী (৩২)।

রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার (দক্ষিণ) মাহবুব আলম এসব তথ্য জানান।

মাহবুব আলম বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জনগণ যে এসব ভুয়া ওষুধ খেয়ে প্রতারিত হচ্ছে, সেখানে জনগণেরও একটি দায়বদ্ধতা আছে। যেসব দোকানে ওষুধ বিক্রয় করা হয় সেসব দোকানের ওষুধের নিবন্ধন নম্বর ও বৈধ ওষুধের তালিকা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেওয়া থাকে। ওষুধ কিনতে যাওয়ার সময় এসব তালিকা দেখার অধিকার সাধারণ ক্রেতাদের আছে। নকল ও ভুয়া ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে ফার্মেসিতে গিয়ে ক্রেতাদের অবশ্যই তালিকাগুলো দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, যারা নকল ওষুধ বিক্রি ও উৎপাদন করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। সামনে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবো। ইউনানি ও হোমিওপ্যাথির লাইসেন্স নিয়ে যারা অবৈধ ওষুধ তৈরি করছে তাদের তালিকা আমরা তৈরি করেছি। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সরবরাহকারী নাকি প্রস্তুতকারী জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিটফোর্ড এলাকায় তারা পাইকারি ওষুধের ব্যবসা করেন। সেখান থেকে তারা সারাদেশে ভেজাল ওষুধ সাপ্লাই করে থাকেন। যারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত তাদেরও তালিকা করছি। আমাদের তালিকা দিন দিন বাড়ছে। সরবরাহকারী বা উৎপাদনকারী সবাইকে আমরা তালিকাবদ্ধ করছি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গতকালের অভিযানে আমরা ১৬টি আইটেম জব্দ করেছি। এই ১৬টি অবৈধ ওষুধের সরবরাহকারী যারা তাদের আমরা গ্রেফতার করেছি। উৎপাদনকারীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন, তবে তারা আমাদের আওতার মধ্যে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

ভেজাল ওষুধ তৈরি কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্ধ হচ্ছে না বিষয়টি এমন নয়। এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। আমাদের পাশাপাশি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরও ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।

ভেজাল ওষুধ উৎপাদন থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত সাইকেলটা কীভাবে কাজ করে জানতে চাইলে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ভেজাল ওষুধ বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে এই সাইকেলটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উৎপাদনকারী কোনো না কোনো ধরনের চাহিদা বাজার থেকে পেয়ে থাকেন। তাদের নিশ্চয়ই বলা হয়, এই ওষুধ তৈরি করে দেন আমারা বাজারে চালিয়ে দেবো। তবে সাইকেলের আসল কেন্দ্র হচ্ছে মিটফোর্ড। মিডফোর্ড থেকেই নকল ওষুধ দেশের সব ফার্মেসিতে যাচ্ছে।

মিটফোর্ড এলাকায় থেকে যারা সারাদেশে নকল ওষুধ পাঠাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে ও সামনের দিনগুলোতেও অভিযান চলমান থাকবে।

দেশে কয়টি প্রতিষ্ঠান ইউনানি লাইসেন্স নিয়ে নকল ও অবৈধ ওষুধ তৈরি করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের তালিকা অনুযায়ী প্রায় ৫০টির মতো রয়েছে। এগুলো অনেক সময় দেখা যায় বন্ধ থাকে। কিন্তু রাতের আধারে কারখানা খুলে মাঝে মধ্যে তাদের কার্যক্রম চালায়। পরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তারা এই ওষুধ সারাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাইমুল গোলদার বলেন, অভিযানে জব্দ ওষুধের মধ্যে বেশিরভাগ হচ্ছে নিবন্ধনবিহীন, নিষিদ্ধ ও ভেজাল ওষুধ। এর মাঝে একটি ওষুধ হচ্ছে পেড়িএকটিন, যা অনেক আগেই ব্যান করা হয়েছে।

মানুষ কীভাবে ভেজাল ওষুধ চিনতে পারবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অভিযান পরিচালনা করছি কিন্তু সাধারণ মানুষ যে বিষয়টি করতে পারে তা হলো নিবন্ধন করা সব ওষুধের তালিকা আমাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে, সেখান থেকে জনগণ এ বিষয়ে জানতে পারে। আর জনগণকে অবশ্যই ইনভয়েস নম্বর দেখে ফার্মেসি থেকে ওষুধ ক্রয় করা উচিত। ইনভয়েস নম্বর হলো ওষুধের সার্টিফিকেট। যে কোম্পানি থেকে ওষুধ ক্রয় করা হয় সে কোম্পানির ইনভয়েস ওষুধ ফার্মেসিকে সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে ফার্মেসিগুলো চাপের মুখে থাকবে। এতে নকল ওষুধের চাহিদা তারা দেবে না।

নকল ওষুধ সেবনে মানুষের কী ক্ষতি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নকল ওষুধ সেবন করলে মূল সমস্যা হয় লিভার ও কিডনিতে। সে কারণে বাংলাদেশে লিভার ও কিডনিজনিত রোগী বাড়ছে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি, এ বেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণ করতে।

গত এক বছরে ওষুধ প্রশাসন ৪৭টি ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করেছে। আর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করেছে সাত কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়েছে ৯২টি।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]