বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণের দায়ে রেলমন্ত্রীর তিন আত্মীয়কে জরিমানা করায় ওই ট্রেনের টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। প্রতিবেদনের নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন টিটিই শফিকুল ইসলাম। আর এ ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হয়েছেন ওই ট্রেনের গার্ড শরিফুল ইসলাম।
সোমবার (১৬ মে) সকাল ১১টা ২০ মিনিটে নিজ কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা নেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহিদুল ইসলাম। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি ৪৭ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদন জমা দেন।
বিনা টিকিটের যাত্রী রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয় ইমরুল কায়েস প্রান্তকে প্ররোচনা দিয়ে টিটিই শফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিয়েছিলেন গার্ড। তাই দোষী প্রমাণিত হওয়ায় গার্ড শরিফুলকে শাস্তি ও যাত্রী প্রান্তকে গণমাধ্যমের সামনে এসে ক্ষমা চাওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে শাহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিবেদনের ৯ জনের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়েছে। টিটিই শফিকুলের সঙ্গে ওই যাত্রীদের কোনো বাগবিতণ্ডা হয়নি। শরিফুল ইসলাম ব্যক্তিগত শত্রুতায় শফিকুলকে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন। ঢাকায় গিয়ে ওই যাত্রীদের ফুসলিয়ে শফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদেও এমন তথ্য মিলেছে।
রেলমন্ত্রীর স্ত্রী ও রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের বিষয়ে তিনি বলেন, রেলমন্ত্রী মহোদয়ের স্ত্রীর বিষয়টি যেহেতু নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেহেতু এই প্রতিবেদনের সেটা উঠে আসেনি। কারণ, নাসির উদ্দিনকে শোকজ করা হয়েছে। তাকে সাত দিনের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সেই জবাব পেলে এ বিষয়ে (রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ও ডিসিও সংশ্লিষ্টতা) বলা সম্ভব হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলাম বলেন, কোনো চাপ ও প্ররোচনা ছাড়াই আমরা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রতিবেদন তৈরি করেছি। গার্ড শরিফুল টিটিই শফিকুলের ওপর ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুব্ধ ছিলেন, এ কারণে ওই যাত্রীকে দিয়ে তিনি অভিযোগ করান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদে টিটিই শফিকুলের কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগের সত্যতা মেলেনি, তাই তাকে নির্দোষ হিসেবে প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, অভিযোগকারী যাত্রী ইমরুল কায়েস প্রান্তর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই তার বক্তব্য আমলে নেওয়া হয়নি। আর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বাকি দুই যাত্রী অপ্রাপ্তবয়স্ক। এ জন্য তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রতিবেদনে সম্পৃক্ত করা হয়নি।
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন টিটিই শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। শুরু থেকেই আমি শতভাগ আশাবাদী ছিলাম আমি ন্যায় বিচার পাব। এ জন্য সাংবাদিক ও রেলমন্ত্রী মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।
গার্ড শরিফুল ইসলামের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার স্মরণমতে, আমার সঙ্গে তার কোনো শত্রুতা ছিল না। কেন সে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করিয়েছে, তা আমি বলতে পারব না।
প্রসংগত, গত শুক্রবার (৬ মে) রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করায় তিন যাত্রীকে জরিমানা করায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ৮ মে দুপুরে নিজ ক্ষমতাবলে টিটিই শফিকুল ইসলামের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে স্বপদে বহাল করেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক শাহিদুল ইসলাম। একই সঙ্গে তিনি বরখাস্তকারী পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে শোকজ করেন।
ডিএম/তাজা/২০২২