868

04/20/2024 পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে তৈরি হচ্ছে সুতার আঁশ

পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে তৈরি হচ্ছে সুতার আঁশ

রকমারি ডেস্ক

৫ এপ্রিল ২০২১ ০০:২৭

বগুড়ার শিবগঞ্জে ফেলে দেওয়া কলাগাছের বাকল থেকে তৈরি হচ্ছে ফাইবার। এ ফাইবারের সুতা হস্তশিল্পে ব্যবহার হবে। ফাইবার বা আঁশ পাওয়ার পর এর বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট সার।
উৎপাদিত এসব পণ্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া জেলা কলা চাষের জন্য বিখ্যাত। সারা বছর জেলায় প্রায় ১১শ’ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়। এর মধ্যে শুধু শিবগঞ্জ উপজেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে পাঁচ হাজার চাষী কলা চাষ করেন। চাষীরা জমি থেকে কলার ছড়া/কাঁদি সংগ্রহের পর গাছ যেখানে সেখানে ফেলে দিতেন। ফলে গাছগুলো পচে পরিবেশ দূষণ হতো।

শিবগঞ্জের অর্জুনপুর গ্রামের উদ্যোক্তা বকুল হোসেন পরিত্যক্ত এসব কলাগাছ সংগ্রহ করে বিশেষ পদ্ধতিতে এর বাকল থেকে আঁশ বা ফাইবার সংগ্রহ করছেন। তিনি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়ন ও সহযোগিতায় গড়ে তুলেছেন মেসার্স বকুল ফাইবার অ্যান্ড ভার্মি কম্পোস্ট প্লান্ট। পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় কয়েকজন বেকার নারী ও পুরুষ তার প্লান্টে কাজ করছেন।

উদ্যোক্তা বকুল হোসেন জানান, একটি কলাগাছ থেকে প্রায় ৪০০ গ্রাম ফাইবার তৈরি হয়। ৯০ টাকা খরচে উৎপাদিত প্রতি কেজি ফাইবার বিক্রি করেন ১৪০ টাকায়। পাশাপাশি স্বল্প খরচে এর পরিত্যক্ত অংশ, গোবর ও কেঁচো একটি রিংয়ের মাঝে ২১ দিন রেখে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করা হচ্ছে। ৬০ কেজি বর্জ্য, পরিমাণমতো গোবর ও হাফ কেজি কেঁচোর মাধ্যমে ৪০ কেজি সার পাওয়া যায়।

তিনি আরও জানান, আগে কলারছড়া সংগ্রহের পর চাষীরা গাছগুলো যত্রতত্র ফেলে দিতেন। এতে গাছগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াতো ও পরিবেশ দূষিত হতে। এখন সে ফেলে দেওয়া কলাগাছ থেকে সূতা ও বর্জ্য থেকে সার তৈরি হয়। এতে বেকারদের কর্মসংস্থান হবে বলে তিনি আশা করেন।

শিবগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ জানান, নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্যোক্তার উন্নতির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি এ প্রকল্পের উদ্যোক্তা ও সহযোগীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।

এ প্রকল্পের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে ফাইবার তৈরির মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে সুতা দিয়ে পরিবেশবান্ধব হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। এসব পণ্য রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। বর্তমানে শিবগঞ্জের অর্জুনপুরে দুটি মেশিনে কলাগাছ থেকে ফাইবার তৈরি করা হচ্ছে। প্রায় ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের প্রতিটি মেশিনের জন্য কলাগাছ প্রক্রিয়াজাত ও অনন্য কাজের জন্য তিনজন শ্রমিক করছেন।

মেশিন থেকে পাওয়া ফাইবার পানিতে ধোয়ার পর তা রোদে শুকানো হচ্ছে। এরপর এসব ফাইবার প্রক্রিয়াজাত করে সুতা তৈরি করে তা দিয়ে বিভিন্ন সৌখিন হস্তশিল্প পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান সুতা তৈরি করে পণ্য উৎপাদন করছে।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি ছাদেক আহমদ বলেন, প্রাকৃতিক জিনিসপত্রের চাহিদা দেশে বিদেশে রয়েছে। এটা ভবিষ্যতে আরও বড় মার্কেট হবে। আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। আরও বেশি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে, ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসবে। এ শিল্পের আরও প্রসার হবে।

টিএমএসএসের উপ-নির্বাহী পরিচালক সোহরাব আলী খান বলেন, কলাগাছের ব্যবহার হবে, সুতা পাব আমরা। আর এ সুতা ব্যবহার করে জিনিসপত্র তৈরি হচ্ছে। এর বর্জ্য থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে; যা অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]