দাবদাহে পুড়ছে দেশ, ঘরে-বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি
 প্রকাশিত: 
 ২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৫৬
 আপডেট:
 ১ নভেম্বর ২০২৫ ০৪:২৬
 
                                বৈশাখের শুরুর থেকেই গ্রীষ্মের রুদ্ররূপ দেখছে রাজধানীসহ সারাদেশ। কাঠফাঁটা রোদে তপ্ত চারপাশ। গরম বাতাসে ঘরে-বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। তীব্র গরমে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় অনুভূত হচ্ছে গরম। তাপদাহের কারণে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ বৃষ্টির জন্য আকাশপানে তাকিয়ে থাকলেও আপাতত সুখবর দিতে পারছে না আবহাওয়া অফিস। সংস্থাটি বলছে পুরো এপ্রিলজুড়েই সারাদেশে থাকবে তাপপ্রবাহ। মাঝেমধ্যে সামান্য বৃষ্টির দেখা মিললেও গরমের অস্বস্তি কমার সম্ভাবনা তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কায় সারাদেশে জারি করা হয়েছে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা।
কয়েকদিন ধরেই চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তীব্র গরমে অতিষ্ট অবস্থা রাজধানীতেও। আজও একই অবস্থা থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ফলে গরমের মধ্যেই আরও কিছুদিন কাটাতে হবে দেশবাসীকে।
শনিবার ছুটির দিন হলেও যারা কাজে বেরিয়েছেন তীব্র গরম তাদের ভোগাচ্ছে। শ্রমজীবী আর গণপরিবহনের যাত্রীদের অবস্থাও সঙ্গীন। ঘামে ভেজা মানুষ খানিকটা স্বস্তির খোঁজ করলেও মিলছে না সেই স্বস্তি। নগরীতে লোকাল বাসে চলাচলকারী যাত্রীদেরও ভোগান্তির যেন শেষ নেই। যাত্রী নিয়ে ছুটে চলা প্রতিটি গাড়ির ভেতরে উনুনের মত উত্তাপ। ঘেমে একাকার যাত্রীরা। টপটপ করে পানি ঝরছে তাদের শরীর বেয়ে।
অফিসগামী মানুষ গরম উপেক্ষা করে সকালে অফিসে পৌঁছালেও ভালো নেই দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। রিকশা চালক, পরিবহন শ্রমিকরা নাকাল হচ্ছেন তীব্র গরমে। পথের পাশে একটু ছায়া পেলেই সেখানে বিশ্রাম নিচ্ছেন মানুষ। সেখানে কিছুটা বাতাসের দেখা মিললেও সেটিও গরম হাওয়া।
উত্তাপের কারণে ঘরের ভেতরেও থাকা কষ্টকর হয়ে গেছে। ফ্যান থাকলেও গরম বাতাসে গা ভিজে যাচ্ছে। দিনের বেলায় বাইরে থাকা আরও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গরমের কারণে বেশি সময় যাত্রী পরিবহন করতে পারছেন না রিকশাচালকরা। দীর্ঘ সময় বিশ্রাম নিয়ে যাত্রী পরিবহন করতে চাইলেও ভাড়া হাঁকছেন বেশি। রিকশা চালকদের ভাষ্য, গরমের কারণে তাদের মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম হচ্ছে।
এমন অবস্থার মধ্যে মানুষ আকাশপানে তাকিয়ে থাকলেও বৃষ্টির তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এপ্রিলজুড়েই গরম দাপট দেখাবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলেও তাতে গরম খুব একটা কমার সম্ভাবনা নেই বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। গরমের কারণে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, হিট অ্যালার্ট তিনদিনের জন্য জারি করা হয়েছে। এই সময় সবাইকে গরম থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকতে হবে। তবে সারাদেশে হিট অ্যালার্ট জারি থাকলেও কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আগের আভাস ছিল এই সপ্তাহে তাপমাত্রা বেড়ে ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে পারে। শুক্রবার তেমনটাই দেখা গেছে। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা গতকাল পর্যন্ত এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আবহাওয়া অধিদফতর আরও বলছে, দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া চলমান তাপপ্রবাহ আরও তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পুরো এপ্রিলজুড়েই তাপমাত্রা ভোগাবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, জলীয়বাষ্প বেশি থাকার কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে। একইসঙ্গে সমুদ্রের লঘুচাপটি পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করার গরম প্রভাব দেখা যাচ্ছে ভূপৃষ্ঠে। এর আগে দেশে ১৫ থেকে ১৩ দিন পর্যন্ত লাগাতার তাপপ্রবাহ থাকার রেকর্ড থাকলেও এবার চলতি মাসের ১৯ দিনই টানা তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী পাঁচ দিনেও আবহাওয়ায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, এপ্রিলজুড়েই তাপমাত্রা ওঠা-নামা করবে ৩৬ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে। তবে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় গরম অনুভূত হবে এর চেয়েও বেশি। এসময় কোথাও কোথাও বৃষ্টি সাময়িক স্বস্তি দিলেও দাবদাহ থেকে যাবে মে মাস পর্যন্ত।

 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: