বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫, ২৮শে ফাল্গুন ১৪৩১


ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিস্তার পানিতে নেমে প্রতিবাদ


প্রকাশিত:
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৮

আপডেট:
১২ মার্চ ২০২৫ ১০:৩১

ছবি সংগৃহীত

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে উত্তরের ৫ জেলায় টানা ৪৮ ঘণ্টার আন্দোলন কর্মসূচি চলছে। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে তিস্তা নদীতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা।

লালমনিরহাট ও রংপুরের তিস্তা রেলসেতু প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ তিস্তা নদীর হাঁটু পানিতে নামে। ভারতের পানি আগ্রাসন বন্ধ করা, মরুকররণ থেকে নদী রক্ষায় তিস্তা পানির ন্যায্য হিস্যা প্রদান এবং বন্যার ভাঙন থেকে তিস্তাপাড়ের মানুষকে রক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়। এ সময় ‘তিস্তা নদী আমার মা, মরতে আমরা দিব না’, ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।

৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা অববাহিকার ১১৫ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে। তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও ভারত এক তরফা বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং প্রায় ছয় লাখ হেক্টর জমিতে সেচের জন্য পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বাংলাদেশের জন্য পানি ছাড়ে। যে পানি আশীর্বাদ না হয়ে বেশির ভাগ সময়ে এ দেশের মানুষের জন্য বয়ে আনছে অভিশাপ। ফলে অসময়ে তিস্তাপাড়ে বন্যা দেখা দিচ্ছে, বছর বছর বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।

এদিকে পানিতে দাঁড়িয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে আন্দোলনে অংশ নেওয়া কাউনিয়ার সারাই ইউনিয়নের কৃষক মফিজুর রহমান বলেন, ‘মুই দশ বিঘা ভুঁই আবাদ করো। এ্যালা শ্যালো মেশিন আর কারেন দিয়্যা আবাদ করা নাগোচে। আর যখন বানের (বন্যা) সময় তখন পানি ছাড়ি দিয়্যা হামাক ডুবি দেয়, আর এ্যালা পানি অভাবোত হামার আবাদ হয় না।’

লালমনিরহাট সদরের মিশন মোড় থেকে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, আগের সরকার হামাক আশায় আশায় ঘুরাইছে, কিন্তু হামার কোন কাজ করি দেয় নাই। এই সরকার এবার কি করে তাকে দেখার আশায় বসি আছি।

অলিয়ার রহমান আরেকজন বলেন, হামরা গ্রামের মানুষ আইনের কোনো কিছু বুঝি না, হামরা চাই সঠিকভাবে আবাদ করিবার। হামরা বুঝি না পানির আইন, বুঝি না কোন নিয়ম কানুন। হামরা পানি চাই, মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন চাই।

শুধু অলিয়ার, রবিউল ও মফিজুর রহমানেই নন, তার মতো হাজারো কৃষকের একই অভিযোগ। তাদের সকলের চাওয়া অবিলম্বে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়সহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হোক।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিস্তা রেল সেতু লালমনিরহাট পয়েন্ট থেকে গণপদযাত্রা শুরু হয়। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর নেতৃত্বে পদযাত্রাটি তিস্তা সড়ক সেতু হয়ে তিস্তা রেল সেতু পয়েন্ট গিয়ে শেষ হয়।

এদিকে গতকাল সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে তিস্তা পাড়ে ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার অবস্থান, জনতার সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচি। রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তা রেলওয়ে সেতু-সংলগ্ন পয়েন্টে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিস্তা বিস্তৃত রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামের ১১টি পয়েন্টে অনুষ্ঠানরত স্মরণকালের এই বৃহৎ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে এ অঞ্চলের সর্বস্তরের লাখো মানুষ। প্রথম দিনের মতো আজ সমাপনী দিনেও সকাল থেকেই ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করছে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি’। সেই সঙ্গে প্রতিবাদ হিসেবে দেশীয় সংগীত, নৃত্য, খেলাধুলাও চলছে।

কর্মসূচির সমাপনী সমাবেশে বিকেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top