‘কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা ছিল ছাত্রলীগের মতো’
প্রকাশিত:
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:০২
আপডেট:
৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:৪৩

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রদল। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কুয়েট ছাত্রদল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া।
আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন একটি বাংলাদেশে আমরা পদার্পণ করেছি। সেই বাংলাদেশে যদি আমরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বলি ছাত্র রাজনীতি থাকবে না। বিগত জুলাই-আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন না আনলে রাজনীতি করাটা কঠিন হবে। ছাত্রদল শুরু থেকেই ইতিবাচক রাজনীতি করে আসছে। সংকটটা তখনই প্রকট হবে যদি আপনি জুলাই-আগস্টের স্পিরিটের সঙ্গে না যান। ছাত্রদল সব সময় জুলাই-আগস্টের স্পিরিটকে ধারণ করে প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করতে চায়। আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ চাই। যেখানে সব দলের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। ছাত্রলীগের মতো একটি দলই রাজনীতি করবে, বাকিদের যদি রাজনীতি করতে না দেন তাহলে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন সেই শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।
সংবাদ সম্মেলন ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম বলেন, কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। তারা রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামীতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা কুয়েটে নিজেদের কার্যক্রম চালু রেখে কোন মুখে দাবি করে তারা এখানে ছাত্র রাজনীতি চালু করতে দেবে না। কুয়েটের ৭৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্যাডে হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত একটি কমিটি প্রকাশিত হয়েছে। সেই কমিটি স্পষ্ট প্রকাশ পায় যে সেখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু আছে।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে- ছাত্রদলের ছেলেরা হেঁটে যাচ্ছে, অপরদিকে ওরা মিছিল নিয়ে আসছে। সেখানে প্রতিষ্ঠানের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ওমর ফারুক দেখিয়ে দিচ্ছে ছাত্রদলের ছেলেরা যাচ্ছে এবং তার উসকানিতে ছাত্রদলের ছেলেদের তারা ধরেছে এবং পরবর্তী প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ছাত্রলীগের মতো যারা আচরণ করবে, তাদের পরিণতিও ছাত্রলীগের মতো হবে। কিন্তু আমরা জাতির সামনে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি গতকালকের এ ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দায়ী এবং তাদের ভূমিকা ছিল ছাত্রলীগের মতোই।
লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) একটি চরম অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় মারাত্মকভাবে হতাহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দ। আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এখানে সরেজমিনে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এসেছি। আমরা আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করার সাথে সাথে উক্ত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এসব ন্যাক্কারজনক হামলাতে ও এসবের উসকানিতে জড়িত যেই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক তাদের সকলকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে অনলাইনে ও অফলাইনে নিরন্তর অপপ্রচারের মাধ্যমে সত্য ঘটনাকে চাপা দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নামে যে মিথ্যা অপবাদ চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার জবাবে বাস্তব প্রেক্ষাপটে আমাদের সংগঠনের নৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করা অতিজরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও আমরা এখানে তদন্তের দায়ভার নিয়ে এসেছি এবং মোটা দাগে একটি প্রতিবেদন আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নিকট জমা দেব, কিন্তু তারপরও প্রশাসন কর্তৃক আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পর বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত এসব ঘটনার পুরো সত্য-মিথ্যা নির্ধারণ সম্ভব হবে না।
তবে ইতোমধ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বয়ান, সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন ও ছবি/ভিডিও প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি সে অনুযায়ী গতকালকের (মঙ্গলবার) এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে রাহুল জাবেদ (২০২১-২২ সেশন), ইফাজ (২০২২-২৩ সেশন) ও ইউসুফ (২০২২-২৩ সেশন) নামক তিন জন ছাত্রদল সমর্থকের ওপর অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে।
সেই মিছিল থেকেই ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে, যখন ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে অতি সাধারণভাবেই মিছিলটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কতিপয় মিছিলকারী তাদের দিকে অতর্কিত তেড়ে যেয়ে হামলার সূচনা করে। ভুক্তভোগীদের বয়ান অনুযায়ী তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েট গেটের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং গেটের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্থা করা হয়। যার জবাবে সেই দোকানমালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় লোকজন সশস্ত্র হামলা চালায় সেই মিছিলকারীদের ওপর। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া চলে, কুয়েটের গেট হয়ে উঠে এক রণক্ষেত্র। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে সেই এলাকায় চলে ন্যাক্কারজনক সহিংসতা। সেই সহিংসতায় জড়িত কতিপয় স্থানীয় দলীয় কর্মীকে ইতোমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। তবে তাদের কেউই হাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত নন এবং ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর কোনো কারণও তাদের নেই।
উল্লেখ্য যে, সহিংসতায় ছাত্রদলের উক্ত সমর্থকেরা কেবলমাত্র ভুক্তভোগী হিসেবে জড়িত ছিলেন বলেই এখন পর্যন্ত জানা গেছে। তাদের তিনজনই কুয়েটের সম্মান কোর্সের নিয়মিত শিক্ষার্থী। যেহেতু কুয়েটে ছাত্রদলের কোনো কমিটি গঠিত হয়নি, এবং এখনো পর্যন্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি, সেহেতু তারা তিনজন ছাত্রদলের নিবন্ধিত কর্মীও নন। তাই তাদেরকে কেন্দ্র করে ঘটা কোনো ঘটনাকে ‘ছাত্রদলের হামলা’ শীর্ষক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি কাজ।
আবু আফসান মো. ইয়াহিয়া আরও বলেন, ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু না হলেও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শে উজ্জীবিত শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত বলে তারাসহ আরও কিছু শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত করে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারের পেছনে লুকানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির ধারক বাহক ইসলামি ছাত্রশিবিরের গুপ্ত কর্মীরা ও ক্যাম্পাসে রয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা। ছাত্রদল কুয়েট ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও এসব গুপ্ত ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে উক্ত মব মিছিলটির পূর্বে ছাত্রদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে ক্যাম্পাসে বিশাল ব্যানার টানানো হয় এবং মিছিল থেকে বিনা উসকানিতে ছাত্রদলের উপরোক্ত সমর্থকদের ওপরে হামলা চালানো হয়। এসব ঘটনা চলাকালে এবং পরবর্তীতে কোনোরূপ তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই স্থানীয় জনতার সাথে কুয়েট শিক্ষার্থীদের এই ন্যাক্কারজনক সহিংসতাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ছাত্রদলের হামলা’ বলে পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সময়ের সাথে যত বেশি তথ্য উন্মোচিত হচ্ছে, তত আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনাটির সত্য রূপ পুরোই ভিন্ন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার, সাফি ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাহেদ হাসান, হাসানুর রহমান, শাহাদাত হোসেন, সোহেল রানা, নুরুজ্জামান চন্দন, কুয়েট শিক্ষার্থী রাহুল জাবেদ, ইফান ফয়সাল, শেখ জিলানী ও মাসুম।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: