রংপুরে বেচাকেনা ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে
প্রকাশিত:
১৯ জুন ২০২৫ ১১:০৮
আপডেট:
১৯ জুন ২০২৫ ১৪:৫৭

রংপুরের জিআই পণ্যখ্যাত ‘হাঁড়িভাঙা’ আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই আম বিক্রি শুরু হয়েছে। আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এবার ২০০ কোটি টাকার বেশি আম বিক্রি হবে রংপুরের বাগানগুলো থেকে। এ বছর আম বেশি উপাদন হওয়ায় বাজারে দাম কিছুটা মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। তবুও চাষিরা উৎপাদন বেশি হওয়ায় গড় লাভের আশা করছেন।
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই আম বিক্রি শুরুর উদ্বোধন করেন। আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে আম বিপণন শুরু হয়েছে।
আমচাষি, ব্যবসায়ী ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গড়ে ৫০-৬০ টাকা কেজি ধরলেও হাঁড়িভাঙা আমকে কেন্দ্র করে রংপুরে এ মৌসুমে প্রায় ২০০ কোটি টাকার লেনদেন ছাড়িয়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাঁড়িভাঙা আমের মাধ্যমে রংপুরের কৃষি অর্থনীতি চাঙা হয়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হওয়ায় কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েছে। অথচ এখনো সম্পূর্ণ পরিপক্ব হয়নি হাঁড়িভাঙা আম। নির্ধারিত সময়ের আগেই কৃত্রিমভাবে আম পাকিয়ে বাজারজাত করায় বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। গাছ থেকে আম সংগ্রহের ৮-১০ দিন আগে অনেকে ছত্রাকনাশক, কীটনাশক স্প্রে করেন।
আম চাষিরা বলছেন, হাঁড়িভাঙা আম পাকলে এটি তিন-চার দিনের বেশি রাখা যায় না। সংরক্ষণের কোনো কার্যকর পদ্ধতিও জানা নেই। যদি এই আম সংরক্ষণের সঠিক প্রক্রিয়া জানা থাকত, তাহলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করা সম্ভব হতো। হাঁড়িভাঙা আম সংরক্ষণের জন্য এ অঞ্চলে একটি বিশেষায়িত হিমাগারের দাবি জানান চাষিরা।
হাঁড়িভাঙা আমের উৎপাদন এলাকা মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ, খোড়াগাছ ও ময়েনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আম বাজারজাত করা হচ্ছে। মঙ্গলবার পদাগঞ্জের হাটে সকাল থেকেই অটোরিকশা, ভ্যান ও পিকআপে করে আসতে থাকে আমের ক্যারেট। অনেককেই হাটের রাস্তায় সাইকেল ও ভ্যানে ক্যারেটে আম নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আম বেচতে দেখা গেছে। ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠেছে আমের বেচাকেনা।
এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে আগেভাগেই আম পারা শুরু হয়েছে। তবে কেউ কেউ আম পাকাতে স্প্রে মেশাচ্ছেন। এতে হাঁড়িভাঙা আমের প্রকৃত স্বাদ থাকছে না। আমচাষি ও উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান ও মাইনুল ইসলাম বলেন, আমের আকার ভেদে প্রতিমন আম সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সহনীয় তাপমাত্রা থাকলে আমের বাজার কিছুটা বেশি হয় বলেও জানান তারা। শুধু পদাগঞ্জ হাটেই নয়, হাঁড়িভাঙা আমের প্রধান উৎপাদন এলাকা খোঁড়াগাছ, পাইকারহাট, ময়েনপুর, চ্যাংমারী, বালুয়া মাসুমপুর, কুতুবপুর, গোপালপুর, লোহানীপাড়া, রামনাথপুর, কালুপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁড়িভাঙ্গা আম বিক্রির দৃশ্য দেখা গেছে।
এছাড়া রংপুর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সড়ক, সিটি বাজার, লালবাগ, মডার্ন মোড়, ধাপ বাজার, শাপলা চত্বরসহ নগরীর বিভিন্ন হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে এই আম। হাট-বাজার ছাড়াও পাড়ামহল্লার অলিগলিতে ফেরি করে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি করতে দেখা গেছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: