নওগাঁয় কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে চালের দাম, মজুতবিরোধী অভিযানের দাবি
প্রকাশিত:
২১ জুন ২০২৫ ১৬:২৩
আপডেট:
২১ জুন ২০২৫ ২১:১৪

দেশের অন্যতম শীর্ষ ধান-চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁয় বেড়েছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালরে দাম বেড়েছে ২-৪ টাকা। পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালে প্রকারভেদে বেড়েছে ৫-৬ টাকা।
ভরা মৌসুমে মিলারদের সিন্ডিকেট এবং মজুতবিরোধী অভিযান না থাকায় চালের এমন আকস্মিক দাম বৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা। হঠাৎ করেই চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষদের।
নওগাঁ শহরের আড়তদারপট্টির পাইকারি চাল বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে জিরাশাইল ৭০-৭২ টাকা, কাটারিভোগ ৬৪-৬৮, শুভলতা ৬০-৬২টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৬২-৬৪ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৫-৫৬ টাকা দরে বিক্রি করছেন মিল মালিক ও আড়তদাররা। এক সপ্তাহ আগে এই মোকামে মানভেদে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৬৬-৬৮ টাকা, কাটারিভোগ ৬২-৬৪ টাকা,শুভলতা ৫৭-৫৮ টাকা, ব্রি আর-২৮ জাতের চাল ৫৯-৬০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ চাল ৫৩-৫৪ টাকা করে বিক্রি হয়েছিল।
অপরদিকে নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চালবাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে কেজি প্রতি ৫-৬ টাকা বেড়ে জিরাশাইল ৭২-৭৫ টাকা, কাটারিভোগ ৭০-৭৫ টাকা, শুভলতা ৬২-৬৪ টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৬৫-৬৬ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এই বাজারে প্রতি কেজি জিরাশাইল ৬৮-৭০ টাকা, কাটারিভোগ ৬৫-৬৮ টাকা, শুভলতা ৫৯-৬০ টাকা, ব্রি আর-২৮ চাল ৬২-৬৩ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫৫-৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মেসার্স তাপস খাদ্য ভান্ডারের প্রোপাইটার তাপস কুমার মন্ডল বলেন, মিলাররা পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল দিচ্ছেন না। ২০ বস্তার চাহিদা দিলে চাল দেন ৫-৭ বস্তা। তার ওপর বস্তা প্রতি ২০০-৪০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যার কারণে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাল মানভেদে গেল সপ্তাহের চেয়ে ৫-৬ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ভরা মৌসুমে বাজারে এভাবে চালের দাম বেশি হওয়া স্বাভাবিক কোনো ঘটনা না। মিলারদের সিন্ডিকেট এবং মজুতের কারণেই চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভরা মৌসুমেই যদি সরকারকে বাইরের দেশ থেকে চাল আনতে হয় তাহলে মৌসুম শেষে কী হবে। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেচা বিক্রিও তেমন নেই।
খুচরা চাল ব্যবসায়ী মেসার্স বুলেট রাইস সাপ্লায়ার্সের প্রোপাইটার মকবুল হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগে কাটারিভোগ ৫০ কেজি ওজনের বস্তুা কিনছি ৩১০০-৩২০০ টাকা দরে। বর্তমানে সেই বস্তুা কিনতে হচ্ছে ৩৪০০-৩৭০০ টাকা দরে। মিলগুলোতে মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনা না হওয়াই মিলাররা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো চালের দাম বাড়াচ্ছেন। মিলগুলোতে অভিযান পরিচালনা করলে কিছুটা চালের দাম কমে আসবে।
চালের আকস্মিক দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নওগাঁর আড়তদার পট্টির সততা রাইস এজেন্সির পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সুকুমার ব্রহ্ম বলেন, দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় সরকারের মজুত নীতিমালার তোয়াক্কা করছেন না অসাধু মজুতদাররা। এবার বোরো মৌসুমের শুরুতেই কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা হাট-বাজারে আসা অর্ধেকের বেশি ধান কিনে মজুত করে রেখেছেন। কৃষকের ধান সাধারণ মিলারদের হাতে একেবারে নেই বললেই চলে। তাই হাট-বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া দামে ধান কিনে চাল করতে গিয়ে মিলারদের খরচ বেড়েছে। যার প্রভাবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম পাইকারি পর্যায়ে ২-৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান জোরালো পদক্ষেপ নেই। যার ফলে বাজারে এই নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। শৃঙ্খলা না থাকায় চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। বাজারে স্বস্তি ফেরাতে চাইলে ধান-চালের অবৈধ মজুতদারদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: