আটক কর্মীকে ছাড়িয়ে আনতে বিএনপি নেতাকর্মীদের থানা ঘেরাও
প্রকাশিত:
৬ জুলাই ২০২৫ ১৪:১৩
আপডেট:
৬ জুলাই ২০২৫ ২৩:২২

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানা ঘেরাও করে আটক ছাত্রদলের এক কর্মীকে ছাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
জানা গেছে, শনিবার (৫ জুলাই) রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে দর্শনা পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট ও দর্শনা পৌর বিএনপির সমন্বয় কমিটির সদস্য নাহারুল ইসলাম মাস্টারের নেতৃত্বে প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী মিছিলসহ থানার সামনে জড়ো হন। এরপরই ওসির সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষে আটক ছাত্রদল কর্মী মানিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে সরকার বিরোধী মিছিল বের করবে এমন খবরে তাদেরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আমাদের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে থানা চত্বরে যায়। থানা ঘেরাও করে আটক কাউকে ছাড়াতে যায়নি।
পুলিশ বলছে, জমি-জমা সংক্রান্তের বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে থানায় আটক করে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার পক্ষের কিছু লোকজন এসেছিল। থানা ঘেরাও এর কোনো ঘটনা ঘটেনি। আটক মানিককে মুচলেকার পরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবৎ এক প্রতিবেশীর সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে দর্শনা পৌর ছাত্রদলের সদস্য মানিকের বিরোধ চলে আসছিল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই প্রতিবেশী বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে বাড়ি ভাঙচুর ও মারামারির অভিযোগে শনিবার (৫ জুলাই) বিকেলে মানিককে আটক করে পুলিশ। সন্ধ্যার দিকে বিএনপির নেতারা থানায় গেলে তাকে ছাড়েনি ওসি। এরপর রাতেই প্রায় দুই শতাধিক বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানা ঘেরাও করে।
এদিকে থানা ঘেরাওয়ের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় মুহূর্তেই। ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রায় দুই শতাধিক মিছিলকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে থানা চত্বরে ঢোকার চেষ্টা করলে এ সময় দর্শনা পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট, পৌর বিএনপির সমন্বয় কমিটির সদস্য নাহারুল ইসলাম মাস্টার তাদের আটকে দেন। পরে নেতাকর্মীরা থানা গেটের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় বিএনপির সিনিয়র নেতারা থানায় প্রবেশ করে ওসির সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেন। আলোচনার পর আটক মানিককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
দর্শনা পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট বলেন, দফায় দফায় দর্শনায় গুঞ্জন ছড়াচ্ছে যে, আওয়ামীলীগ-যুবলীগ সংগঠিত হচ্ছে। তারা যেকোনো মুহূর্তে সরকারবিরোধী মিছিলের নামে সহিংস রূপ নিতে পারে। বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়ায় তারা গোপনে মিটিং করছে, ফোনে যোগাযোগ করছে। এই গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি যেন না ঘটে, সে লক্ষ্যে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও জাতীয়তাবাদী অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানা চত্বরে যায়। পরে থানা পুলিশকে তাদের বিষয়ে অবহিত করা হয় এবং গ্রেপ্তারের দাবি করা হয়।
আটক মানিকের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দর্শনা পৌর বিএনপির সমন্বয় কমিটির সদস্য নাহারুল ইসলাম মাস্টার বলেন, তিনি ছাত্রদলের সদস্য। পারিবারিক কিছু জটিলতার উভয়পক্ষই থানাতে অভিযোগ করেছিল বলে জেনেছি। এ কারণে তাকে আটক করা হয়েছে। যাদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে, তারাও মূলত মানিকের আত্মীয় এবং রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের অনুসারী। দীর্ঘদিন ধরে এই পারিবারিক বিরোধ চলছিল, স্থানীয়ভাবে একাধিকবার মিমাংসার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। আমরা তাকে ছাড়িয়ে নিতে যাইনি বরং চাই প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নিক। তবে আমরা থানায় অনুরোধ করেছি যেন তাকে এজাহারভুক্ত না করা হয় এবং মামলা না দেওয়া হয়, কারণ আমরা মনে করি সে নির্দোষ।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) কনক কুমার দাস বলেন, থানা ঘেরাও এমন না। জমি-জমা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো গণ্ডগোল না হয় এ জন্য দর্শনা থানা পুলিশ একজনকে নিয়ে এসেছিল। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নাই, স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিমাংসা করবে মর্মে মুচলেকায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তার পক্ষের কয়েকজন প্রতিবাদ করেছে। থানা ঘেরাওয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ডিএম /সীমা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: