বুধবার, ১৬ই জুলাই ২০২৫, ৩১শে আষাঢ় ১৪৩২


প্রসূতির পেটে কাপড় রেখেই সেলাই


প্রকাশিত:
১৫ জুলাই ২০২৫ ২১:৪৬

আপডেট:
১৬ জুলাই ২০২৫ ০৪:৪৩

ছবি সংগৃহীত

নরসিংদীতে লিমা আক্তার (২৮) নামে এক প্রসূতির অস্ত্রোপচারের পর পেটের ভেতর ১৮ ইঞ্চির টুকরো মব কাপড় রেখে সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই জহিরুল ইসলাম সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করেছেন।

এর আগে ১৭ জুন (২০২৫) জেলার নরসিংদী সিটি হাসপাতালে প্রসব ব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর - ওই দিন বিকেলে ডা. শিউলি আক্তাররের সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন লিমা। অস্ত্রোপচারের পর পেটের ভেতর ১৮ ইঞ্চির টুকরো মব কাপড় রেখেই সেলাই করে দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

লিমা আক্তার নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের দত্তেরগাও মির্জাকান্দি এলাকার রহিম মিয়ার স্ত্রী।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লিমা আক্তারের প্রসবব্যথা ওঠায় গত ১৭ জুন নরসিংদীর বাসাইল এলাকায় অবস্থিত নরসিংদী সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেলে তাকে অস্ত্রোপচার করেন ডা. শিউলি আক্তার। এ সময় লিমা এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। এরপর ২১ জুন দুপুরে লিমা আক্তারকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাড়ি ফেরার পর তিনি পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। এ বিষয়টি নিয়ে নরসিংদী সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভুক্তভোগী নারীর ভাই জহিরুল ইসলাম।

এ অবস্থায় ফের ভুক্তভোগী নারীকে ২৫ তারিখে পুনরায় একই হাসপাতালে নিয়ে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে সেখানে কিছু ধরা পড়েনি, পরে তাকে নরসিংদীর আরেকটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক দ্রুত তাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলেন এবং তার পেটে কিছু একটা রয়েছে বলে ধারণা দেন। সে অনুযায়ী স্বজনরা রোগীকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান এবং নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। সেখানে পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা নানান পরীক্ষা শেষে নিশ্চিত হন যে তার পেটে রক্ত পরিষ্কার করার ‘মব’ কাপড়ের টুকরো রয়েছে। তারা দ্রুতই অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানান। ৩ জুলাই গভীর রাতে চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ. এইচ. এম. শাখাওয়াত হোসেন দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করে ওই নারীর পেট থেকে ১৮ ইঞ্চি আকৃতির একটি ‘মব’ কাপড়ের টুকরো বের করেন। বর্তমানে ভুক্তভোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ভুক্তভোগী নারীর বড় ভাই জহিরুল ইসলাম বলেন, অস্ত্রোপচার করে এখন আমার বোন মৃত্যু পথযাত্রী। পেটে ইনফেকশন হয়ে গেছে, এখনও পেট ফুলে আছে, দুর্গন্ধ বের হয়, ব্যথায় প্রতিনিয়ত কাতরাচ্ছে সে। দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে মিলিয়ে পাঁচ দিন তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হয়েছে। এখনও সে সংকটাপন্ন। শিশুটিও মায়ের সেবা এবং বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থায় মানসিক ও আর্থিকভাবে পুরো পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

তিনিও আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করেছি। বিএমডিসিতে অভিযোগ করবো এবং পারিবারিক সিদ্ধান্তে মামলা দায়ের করব। আমরা এরকম বাজে চিকিৎসার প্রতিকার চাই এবং এর বিচার চাই।

নরসিংদী সিটি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন মিয়া বলেন, বিষয়টি আমরা জানার পর খোঁজ-খবর নিয়েছি। রোগীর বাড়িতেও গিয়েছি এবং সমঝোতা করার চেষ্টা করেছি। তারা অনেক বেশি টাকা চায়। ভুল করে বিষয়টি হয়ে গেছে, সেটা তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আমরা রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছি।

এ বিষয়ে নরসিংদীর সিভিল সার্জন সৈয়দ মো. আমিরুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ কাজে এ ধরনের ভুল হতে পারে না। শুনেছি রোগী সংকটাপন্ন। রোগীর জীবন বিপন্ন করে তুলে - এত বড় ময়লা পরিষ্কার করার’ মব’ কাপড় পেটে রেখে সেলাই করে ফেলেন কীভাবে? এর প্রতিকার দরকার। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top