রূপপুর গ্রিন সিটি প্রকল্পে দুর্নীতি
‘বালিশকাণ্ডে’ চাকরি গেল এক প্রকৌশলীর, অন্যজনের কমেছে বেতন
প্রকাশিত:
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৫৫
আপডেট:
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:২৩

রূপপুর পারমাণবিকের গ্রিন সিটি প্রকল্পের (২০১৯ সালে নির্মাণাধীন) ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা এবং ভবনে উঠানোর কাজে অস্বাভাবিক ব্যয়ের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহীন উদ্দিনকে 'বাধ্যতামূলক অবসর' দেওয়া হয়েছে। আরেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেনকে 'নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ' করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার (০৫ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘মো. শাহীন উদ্দিন ও মো. আলমগীর হোসেন রাজশাহী গণপূর্ত জোনে কর্মরত থাকা অবস্থায় রূপপুর গ্রিন সিটি প্রকল্পের (২০১৯ সালে নির্মাণাধীন) ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় এবং ভবনে উঠানোর কাজে অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়টি ওই সময়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে ২০১৯ সালের ১৯ মে গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত পৃথক তদন্ত কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় এবং ভবনে উঠানোর কাজে অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তদন্ত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক অস্বাভাবিক ব্যয়ের প্রাক্কলন প্রস্তুতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থেকে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ উপবিধি (খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মো. শাহীন উদ্দিনকে দোষী সাব্যস্ত করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ মোতাবেক সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪ এর উপবিধি ৩ এর (খ) অনুযায়ী তাকে 'বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান' গুরুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
আরেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আলমগীর হোসেন তদন্ত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক অস্বাভাবিক ব্যয়ের প্রাক্কলন প্রস্তুতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থেকে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ এর উপবিধি (খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ' এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দোষী সব্যস্ত করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ মোতাবেক একই বিধিমালার বিধি ৪ এর উপবিধি ৩ (ক) অনুযায়ী 'নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ' গুরুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
দু’জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভাগীয় মামলার বিষয়ে তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ এবং রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বৃহস্পতিবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পৃথক আদেশের মাধ্যমে গুরুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ওই প্রকল্পের আবাসিক ভবনের জন্য ১৬৯ কোটি টাকার কেনাকাটায় পদে পদে দুর্নীতির খবর উঠে আসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
এতে বলা হয়, গণপূর্ত অধিদপ্তরে কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জোন ভিত্তিক যে কেনাকাটা হয়ে থাকে, তার বার্ষিক একটি পরিকল্পনা থাকে। সে ক্ষেত্রে ৩০ কোটি টাকার নিচে কেনাকাটা হলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনুমোদন লাগে না, স্থানীয় পর্যায়েই করা যায়। এর সুযোগ নিয়ে ১৬৯ কোটি টাকার কাজ ৬টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। ফলে প্রতিটি কাজের মূল্য ৩০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন পড়েনি।
সেখানে প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর প্রতিটি বালিশ আবাসিক ভবনের খাটে তোলার মজুরি দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা। কভারসহ কমফোর্টারের (লেপ বা কম্বলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত) দাম ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ টাকা। যদিও এর বাজারমূল্য সাড়ে ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। একইভাবে বিদেশি বিছানার চাদর কেনা হয়েছে ৫ হাজার ৯৩৬ টাকায়। এর বাজারমূল্য অবশ্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
পাঁচটি ২০ তলা ভবনের জন্য এসব কেনাকাটা হয়েছে। প্রতিটি তলায় রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য কমফোর্টার শুধু বেশি দামে কেনাই হয়নি, কেনার পর দোকান থেকে প্রকল্প এলাকায় পৌঁছাতে আলাদা ট্রাক ব্যবহার করা হয়েছে। মাত্র ৩০টি কমফোর্টারের জন্য ৩০ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দেখানো হয়েছে। আর একেকটি কমফোর্টার খাট পর্যন্ত তুলতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ হাজার ১৪৭ টাকা। কমফোর্টার ঠিকঠাক মতো খাট পর্যন্ত তোলা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য তত্ত্বাবধানকারীর পারিশ্রমিক দেখানো হয়েছে প্রতিটির ক্ষেত্রে ১৪৩ টাকা। ঠিকাদারকে ১০ শতাংশ লাভ ধরে সম্পূরক শুল্কসহ সব মিলিয়ে প্রতিটি কমফোর্টারের জন্য খরচ দেখানো হয়েছে ২২ হাজার ৫৮৭ টাকা।
শুধু কমফোর্টার নয়, চাদরের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে। ৩০টি চাদর আনতে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে। আর ভবনের নিচ থেকে খাট পর্যন্ত তুলতে প্রতিটি চাদরের জন্য মজুরি দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: