বর্ণিল উৎসবের আবহ
চলনবিলে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা
প্রকাশিত:
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:০৮
আপডেট:
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:৩০

নাটোরের গুরুদাসপুরে চলনবিলের বিলশা পয়েন্টে যেন রূপ নিয়েছিল এক মহা মিলনমেলায়। প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে বিলসায় নদীর বুকে নৌকার সারি, আর দুই তীরে মানুষের ঢল—সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল এক বর্ণিল উৎসবের আবহ।
নাটোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় ঐতিহ্যবাহী এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান। উদ্বোধনী মুহূর্তেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে উল্লাসের ঢেউ।
এর আগে, সকাল থেকেই আশপাশের গ্রাম ছাড়িয়ে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে বিলপাড়ে। কারো হাতে বাঁশি, কারো হাতে লাল-সবুজ পতাকা, আবার অনেকে দল বেঁধে ঢোল-করতাল নিয়ে হাজির। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধুবান্ধব মিলে নদীর পাড় হয়ে ওঠে যেন এক গ্রামীণ মেলা। বাড়িতে বাড়িতে পিঠা-পায়েস আর নানা পদের খাবারের আয়োজন। কাজের ফাঁকে বৌ-ঝিয়েরাও ভিড় জমায় নদীর ধারে। উপস্থিত দর্শকদের হাসি-আনন্দ, হাততালি আর হর্ষধ্বনি মিলেমিশে তৈরি করে উৎসবের অনন্য পরিবেশ।
চলনবিলের এই নৌকাবাইচে স্থানীয় নৌকার পাশাপশি অংশ নেয় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার বাঘাবাড়ী, উল্লাপাড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বড়-ছোট ১২টি নৌকা। পাল্লা দিয়ে বৈঠা চালানোর সঙ্গে সঙ্গে নদীজুড়ে ওঠে ঢেউয়ের নাচন। আর প্রতিটি নৌকার সঙ্গে বাজতে থাকে ঢাকের তালে তালে প্রতিযোগিতার সুর। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা নদীর দুই পাড়ে অবস্থান নেন। বাইচের তালে তালে দর্শকদের হাততালি এর উল্লাস আয়োজনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
সজীব আলী নামের এক দর্শনার্থী বলেন, প্রযুক্তি আর আধুনিকতার চাপে বর্তমানে নৌকাবাইচের মতো এসব বাঙালি ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। আমার ২৫ বছর বয়সে এরকম আয়োজন এই প্রথম দেখলাম। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার কথা শুনে আমি বাগাতিপাড়া থেকে এসেছি। হাজার হাজার মানুষ এই বাইচ দেখতে এসেছি।
রাসেল আহমেদ নামের অপর একজন বলেন, চলনবিলের বিলসায় আমার শ্বশুরবাড়ি। নৌকাবাইচের কথা শুনে গতকালই পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে এসেছি। অনেক সুন্দর আয়োজন। আমার চাই, নিয়মিত এরকম আয়োজন হোক।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বলেন, আমারা এই ধরনের গ্রামীণ খেলেকে প্রমোট করতে চাই। তারই অংশ হিসেবে আজকের এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন। আমার প্রতিবছর এরকম আয়োজন করতে চাই।
স্বাস্থ্য সচিব সাইদুর রহমান বলেন, নৌকাবাইচের আজকের আয়োজনে মানুষের উপস্থিতিই গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতি মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। আমারা চাই গ্রামীণ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে ভবিষ্যতেও এধরনের আয়োজন অব্যাহত থাকুক।
নাটোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এই প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহীর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশার হাবিবুর রহমান, নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবুল হায়াত, গুরুদাসপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা আক্তারসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: