আ.লীগের আমলে ১৮-২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে: গভর্নর
প্রকাশিত:
২৭ মে ২০২৫ ২০:৪০
আপডেট:
২৯ মে ২০২৫ ০৪:৩১

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি থেকে দুই হাজার কোটি ডলার পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি বিদেশে ৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন, যা ব্যাংক ঋণের অর্থ পাচার করে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে এবং পাচারের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন গভর্নর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএফআইইউ’র প্রধান কর্মকর্তা এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম।
গভর্নর বলেন, অর্থ পাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য নতুন। কেউই এ বিষয়ে আগে প্রস্তুত ছিল না। আইনি জটিলতা কমিয়ে এনে প্রক্রিয়া দ্রুত করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১১টি গ্রুপ নিয়ে যৌথ তদন্ত চলছে।
তিনি আরও বলেন, অর্থ ফেরত আনতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে। ইতোমধ্যে বিদেশে একজনের সম্পদ জব্দ হয়েছে এবং আরও জব্দের প্রক্রিয়া চলছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে পাচারকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা; যাতে আদালতের বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনা যায়। কাউকে হয়রানি করা বা কারও ব্যবসা বন্ধ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। যাদের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে, তা অন্য কারণে।
বিএফআইইউ’র বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরে সংস্থাটিতে ১৭ হাজার ৩৪৫টি সন্দেহজনক লেনদেন ও কার্যক্রম–সংক্রান্ত প্রতিবেদন (এসটিআর/এসএআর) জমা পড়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি। এতে অর্থ পাচার প্রতিরোধে প্রতিবেদনকারী সংস্থাগুলোর সচেতনতা ও সক্ষমতা বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বিএফআইইউ ১১৪টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক হাজার ২২০টি তথ্য বিনিময় হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩.৯১ শতাংশ বেশি।
অনুষ্ঠানে বিএফআইইউ’র প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম বলেন, অর্থ পাচার ও হুন্ডির প্রবণতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনায় এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে সরকার আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংকের এসটিএআর, যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ইউএসডোজ), আইএসিসিসি ও আইসিএআর। এমনকি বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমেও অর্থ পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ও জটিল।
বিএফআইইউ’র পরিচালক মুহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, অর্থ পাচার শনাক্ত ও পুনরুদ্ধার একটি চলমান ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। গত বছরের জুলাই মাসের পর বিএফআইইউ’র কার্যক্রম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। সন্দেহজনক লেনদেনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিভিন্ন সংস্থায় প্রতিবেদন পাঠানো চার গুণ বেড়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: