বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ শোধ করেছে সরকার
প্রকাশিত:
১ জুন ২০২৫ ১২:৫৮
আপডেট:
৩ জুন ২০২৫ ০৪:১৮

বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমাতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরনো দেনা শোধ করছে সরকার। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার, যা নেওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে। ফলে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বের শুরুর দিকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ ছিল খুব সামান্য। দিন যত যাচ্ছে, ঋণ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের ২১ মে পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। অথচ গত জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থবছরের ৭ মাসে তা ছিল মাত্র ১৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, সঞ্চয়পত্রে ঋণ না বেড়ে উল্টো কমে যাওয়া এবং বিদেশি উৎস থেকে ঋণ ছাড় কমে যাওয়াসহ নানা কারণে অর্থবছরের শেষ দিকে এসে ব্যাংক ঋণ দ্রুত বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ঋণ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৫ শতাংশ কমিয়ে এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা করার পরিকল্পনা করেছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে সংশোধন করে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি জানিয়েছেন, ব্যাংক খাতের বর্তমান বাস্তবতায় চলতি অর্থবছরে সরকারের ঋণ ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ২১ মে পর্যন্ত সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ২১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের দেনা শোধ করেছে ৫৬ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা, যা গত জুন শেষে ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমাতে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের দায় শোধ করা হচ্ছে। এতে টানাটানিতে থাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকের টাকা চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। অবশ্য দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চলতি সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ২৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান সরকার ব্যয় সংকোচনের নীতি অনুসরণ করছে। তবে আগের বকেয়া ঋণ ও সুদ পরিশোধ বেড়েছে। পাশাপাশি বেতন-ভাতাসহ সরকারের চলতি ব্যয় প্রতিবছরই বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয় মাত্র ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থবছরের শেষ সময়ে এমনিতেই সরকারের ঋণ বেড়ে থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন বিল পরিশোধের তোড়জোড় থাকে। তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সরকার এখন পর্যন্ত কম ঋণই নিয়েছে।
অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণও কমছে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে নিট ঋণ ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৫৬ কোটি টাকায়। বিদেশি উৎস থেকেও ঋণ ছাড় কমে গেছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: