বৃহঃস্পতিবার, ২৬শে জুন ২০২৫, ১২ই আষাঢ় ১৪৩২


ইউরোর বিপরীতে ডলারের দাম সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন


প্রকাশিত:
২৬ জুন ২০২৫ ১৫:০১

আপডেট:
২৬ জুন ২০২৫ ২০:০৪

ছবি সংগৃহীত

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রভাব এবার পড়েছে বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে। বিশেষ করে মার্কিন ডলারের মান ইউরোসহ অন্যান্য প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ইউরোর বিপরীতে ডলার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বিশ্ববাজারে ডলারের এই দরপতনের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। বিনিয়োগকারীদের মতে, এই অনিশ্চয়তা মার্কিন মুদ্রানীতির ওপর আস্থা কমিয়ে দিয়েছে।

ইউরোর বিপরীতে ডলারের মান ০ দশমি ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১৬৮৭ ডলারে, যা ২০২১ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। এটি আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একইভাবে ব্রিটিশ পাউন্ডের মান বেড়ে ১ দশমিক ৩৬৯০ ডলারে পৌঁছেছে—২০২২ সালের জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে ডলার নেমেছে ০ দশমিক ৮৩৩-এ, যা ২০১১ সালের পর সর্বনিম্ন। ফ্রাঁর বিপরীতে ইয়েনও শক্তিশালী হয়েছে, যেখানে এক ফ্রাঁয় মিলছে ১৮০.৫৫ ইয়েন। অন্যদিকে ইয়েনের বিপরীতে ডলারের দর ১৪৪.৮৯-এ নেমে গেছে।

বিশ্ববাজারে ডলারের শক্তি পরিমাপক সূচক ডলার ইনডেক্সও ২০২২ সালের পর সর্বনিম্ন ৯৭ দশমিক ৪৯১-এ নেমে গেছে।

এ অবস্থার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডের বর্তমান চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সরিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এই ঘোষণা আসতে পারে। ফলে ফেডের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে।

এশীয় মুদ্রাবাজারের বিশ্লেষক কিয়ারান উইলিয়ামস বলেন, 'পাওয়েলের উত্তরসূরিকে এখনই মনোনয়ন দেওয়া হলে বাজারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত তৈরি হবে। এটি ফেডের স্বাধীনতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা ডলারে আগ্রহ হারাতে পারেন।'

এদিকে, বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফেড চেয়ারম্যানকে ‘ভয়ংকর’ বলে আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেন, তিনি যথাযথ হারে সুদ কমাননি। অথচ, একই সময় সিনেটের সামনে বক্তব্য দিতে গিয়ে জেরোম পাওয়েল বলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি মূল্যস্ফীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ফেডারেল রিজার্ভের আসন্ন বৈঠকে সুদহার কমানোর সম্ভাবনা এখন ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল মাত্র ১২ শতাংশ। বছরের শেষ নাগাদ মোট ৬৪ বেসিস পয়েন্ট সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা দেখছেন বিনিয়োগকারীরা, যেখানে কয়েকদিন আগেও ধারণা ছিল ৪৬ পয়েন্ট।

এদিকে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কনীতির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আগামী ৯ জুলাই। ২ এপ্রিল ঘোষিত এই নীতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সব দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে বলা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে।

জেপি মরগান সতর্ক করে বলেছে, নতুন শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে, যার ফলে দেশটি মন্দার মুখোমুখি হতে পারে। সম্ভাব্য মন্দার হার ৪০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলেও তারা জানিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ডলারের শক্তি কমে আসার অন্যতম কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা। এর ফলে ডলারের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবেও আগের মতো গুরুত্ব থাকছে না।

এই পরিস্থিতিতে ইউরো সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। ইউরোপের দেশগুলো প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে ঐকমত্যে পৌঁছানোয় ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা বাড়ছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে ইউরোপীয় মুদ্রার ওপর।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected], [email protected]
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top