বিপিসির ‘তেল চুরি’ বন্ধে ১২ সুপারিশ
প্রকাশিত:
২৭ আগস্ট ২০২৫ ১৬:২৯
আপডেট:
২৮ আগস্ট ২০২৫ ০১:১৮

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা হিসেবে পরিচিত কর্ণফুলী নদী। নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান জ্বালানি পরিশোধন ও মজুত নেটওয়ার্ক। এখান থেকেই পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল ডিপোর মাধ্যমে সারাদেশে সরবরাহ করা হয় তেল। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে তেল চুরি ও অনিয়ম। যা জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) প্রতিবেদনে উঠে আসতেই নাড়া দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে।
এনএসআইয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে খোঁজখবর নিয়ে তারা যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তাতে স্পষ্ট হয়েছে ‘সিস্টেম লস’ নামের আড়ালে সুপরিকল্পিত তেল চুরির ঘটনা।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কর্ণফুলী কেন্দ্রিক তেল চুরির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করেছি। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে চুরি ও সিস্টেম লস অনেকাংশে রোধ হবে।’
অন্যদিকে বিপণন প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, ‘চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনে তেল সরবরাহ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। এসপিএম প্রকল্পও শিগগির চালু হবে। একই সঙ্গে ডিপো অটোমেশন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় ভবিষ্যতে তেল চুরি বা অনিয়মের সুযোগ থাকবে না বলে আশা করা হচ্ছে।’
তদন্ত শেষে গত ২২ জুলাই জ্বালানি সচিবের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে তেল চুরি বন্ধে ১২ দফা সুপারিশ করেছে কমিটি। এর ভিত্তিতে জ্বালানি বিভাগ বিপিসিকে (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ইতিমধ্যে ২৫ আগস্ট তিন বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান—পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলসহ অংশীদারি সংস্থা এসএওসিএলকে লিখিতভাবে সুপারিশ বাস্তবায়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কমিটির ১২ সুপারিশ
১. সিস্টেম লস বাস্তবতার ভিত্তিতে পুনঃনির্ধারণ।
২. লাইটারেজের বদলে এসপিএম প্রকল্প ও চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনে সরবরাহ নিশ্চিত করা।
৩. ম্যানুয়াল পরিমাপের বদলে অটোমেটেড *কাস্টডি ট্রান্সফার ফ্লোমিটার* ব্যবহার।
৪. অবৈধ তেল প্রবেশ ঠেকাতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশের অভিযান জোরদার।
৫. রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৬. পাম্প ও খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে নিয়মিত অভিযান, অনিয়মে শাস্তি ও লাইসেন্স বাতিল।
৭. বেসরকারি রিফাইনারিগুলো নিয়মিত মনিটরিং।
৮. তেল পরিবহনের সব মাধ্যমকে রিয়েল টাইম মনিটরিংয়ের আওতায় আনা।
৯. ট্যাংকলরি, জাহাজ ও ওয়াগনে ডিজিটাল লকিং সিস্টেম চালু।
১০. ডিপো থেকে বিতরণকৃত তেলের মান ও মেইন ইনস্টলেশনের তেলের মান সমান রাখা।
১১. বিএসটিআই কেলিব্রেশন মেনে ট্যাংকলরির মাধ্যমে সঠিক পরিমাপ নিশ্চিত করা।
১২. সব পাম্পে অভিন্ন স্পেসিফিকেশনের ডিসপেনসিং মেশিন ব্যবহার, বাইরের কন্ট্রোল সিস্টেম ভেতরে সরিয়ে নেওয়া।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: